ভূমধ্য সাগরে হারানো জীবনের গল্প

ইউরোপে পাড়ি জমানোর আশায় দালালকে টাকা দিয়ে লিবিয়া পৌঁছানোর পর নাজিম উদ্দিনকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে কয়েক মাস। লিবিয়ার জেল তাকে মুক্তি দিলেও ভূমধ্য সাগর তাকে রেহাই দেয়নি।

মাদারীপুর প্রতিনিধিসুনামগঞ্জ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 07:05 AM
Updated : 15 May 2019, 07:36 AM

সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে শুক্রবার তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে সুনামগঞ্জের নাজিম উদ্দিন এজন।

রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ওই নৌকায় বাংলাদেশি ও মিশরীয় মিলিয়ে ৮৫ থেকে ৯০ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। ৪০-৪৫ জন বাংলাদেশি এখনও নিখোঁজ, তাদের লাশ উদ্ধারের আশাও ফিকে হয়ে আসছে।

যাদের লাশ শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন সুনামগঞ্জের নাজিম উদ্দিন (২২) ও মাহবুবুল করিম (২৪) এবং মাদারীপুর সদর উপজেলার সজীব হোসেন (২০)। মাদারীপুর জেলার আরও চারজন নিখোঁজ, প্রতিটি পরিবারেই চলছে শোকের মাতম।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের নুরুল্লাহপুর গ্রামের মো. আজির উদ্দিনের ছেলে নাজিম সিলেটের মদন মোহন কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

তার চাচা শাহিন আহমেদ জানান, স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন নাজিম। ২০১৮ সালের মে মাসে অবৈধভাবে লিবিয়া পৌঁছানোর পর তাকে জেলে যেতে হয়।

বাম দিকে খেকে নিখোঁজ- মনির হোসেন মাতুব্বর ও জাকির হোসেন

“মুক্তি পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বিয়ার জুয়ারা শহর থেকে নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় নাজিম। গভীর সাগরে গিয়ে তাদের বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় তোলা হয়, তার কিছুক্ষণ পর উত্তাল ঢেউয়ের মুখে নৌকাটি ডুবে যায়।”

শাহিন বলেন, “দালাল আমাদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। টাকা দিলাম, কিন্তু আমার ভাতিজাকে হারালাম।”

দিরাই উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে মাহবুবুল করিমও লিবিয়া পৌঁছান গতবছর। বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগি বাজারের এক দালাল লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাহবুবের বড় ভাই রেজাউল করিমের কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছিলেন।

রেজাউল বলেন, “দালাল পারভেজ আমাকে বলেছিল, আমার ভাই ইতালি পৌঁছে গেছে। কিন্তু এখন শুনি আমার ভাই পৌঁছায় নাই, সে নৌকা ডুবে মারা গেছে।”

সুনামগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিট লেভেল অফিসার কনিকা তালুকদার জানান, প্রথমে তারা সুনামগঞ্জের তিন জনের মৃত্যুর খবর শুনেছিলেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, মাহবুরের নাম দুইবার চলে এসেছে।

নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত সজীব হোসেনের (২০) গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরেও চলছে শোকের মাতম।  সজীব মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের উত্তর শিরখাড়া এলাকায় আজিজ শিকদারের ছেলে।

তার বড় বোন মীম আক্তার বলেন, বছর খানের আগে মাদারীপুরের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে তার ভাই লিবিয়া যায়। সেখান থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

নৌকাডুবির ওই ঘটনায় মাদারীপুরের আরও চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মাদারীপুর জেলা শাখার যুব প্রধান শিশির হোসেন জানিয়েছেন।

মৃত সজীব সজীব হোসেন

এরা হলেন- সদর উপজেলার বল্লভদী এলাকার আদেল উদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে মনির হোসেন মাতুব্বর (২১) ও শ্রীনদী এলাকার জোবায়ের মাতুব্বরের ছেলে নাদিম মাতুব্বর (১৬), সদর উপজেলার মঠেরবাজার এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে সাইফুর ইসলাম (২৩), শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের সেকান্দার হাওলাদারের ছেলে জাকির হোসেন (২৮)।

লাশ দ্রুত দেশে আনতে এবং নিখোঁজদের খোঁজ পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বজনরা। এছাড়া দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।