নুসরাত হত্যা: কেরোসিন ছিটাতে ব্যবহৃত সেই গ্লাস উদ্ধার

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার সময় যে গ্লাসে করে তার গায়ে কেরোসিন ছিটানো হয়েছিল, সেটি উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2019, 04:45 AM
Updated : 9 May 2019, 04:45 AM

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষের দপ্তরের সামনের ওয়াল কেবিনেটের ভেতর থেকে বুধবার রাতে গ্লাসটি মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

রিমান্ডে থাকা আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন ও যোবায়ের আহমেদকে নিয়ে রাতে ওই গ্লাস উদ্ধারে অভিযানে যায় পিবিআই।

ওই তিন আসামি এর আগে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে আরও এক দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই আসামিরা নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় কেরাসিন ছিটানোর জন্য একটি গ্লাস ব্যবহার করার কথা বলেছিল। এর ভিত্তিতেই তাদের নিয়ে রাতে মাদ্রাসায় অভিযান চালানো হয়।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, পরিদর্শক মো. মোনায়েম হোসেন, পরিদর্শক লুৎফুর রহমানও সে সময় উপস্থিত ছিলেন।

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন চলতি বছরের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত। গত ২৬ মার্চ নুসরাতের মা শিরীনা আক্তার মামলা করার পরদিন সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওই মামলা প্রত্যাহার না করায় ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার হল থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয় বোরখা পরা চারজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। নুসরাতের মৃত্যুর পর তা হত্যামামলায় রূপান্তরিত হয়, যার তদন্ত করছে পিবিআই।

মামলার আজাহারে নাম থাকা আটজনসহ মোট ২১ জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। তাদের মধ্যে নুসরাতের দুই সহপাঠী, ওই মাদ্রাসার কয়েক ছাত্র এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতাও রয়েছেন। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে তাদের দেওয়া জবানবন্দি থেকে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত জানতে পারেন তদন্তকারীরা। অধ্যক্ষ কারাগারে থেকেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে তদন্তে উঠে আসে।

নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি বোরকার মধ্যে শাহাদাত ও জোবায়েরের বোরকাটি উদ্ধার করলেও জাবেদের ব্যবহৃত বোরকাটি পাওয়া যায়নি। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।