আইনজীবী পলাশের মৃত্যু: তদন্ত দল ঘটনাস্থলে দাহ্য পদার্থ ‘পায়নি’

পঞ্চগড় কারাগারে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের দগ্ধ হওয়ার স্থানে দাহ্য পদার্থের অস্তিত্ব পায়নি বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল জানিয়েছে।  

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2019, 02:52 PM
Updated : 8 May 2019, 04:29 PM

জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট এহেতেশাম রেজা বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন, কারা হাসপাতালের অন্য বাসিন্দাদের বক্তব্যসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে বলে জেনেছি।”

তিনি তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, “ঘটনাস্থলে প্রাথমিকভাবে আমরা দাহ্য কোনো পদার্থের অস্তিত্ব পাইনি।”

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে রংপুর উপ কারা মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শেষ করেছে। রাজশাহী বিভাগীয় উপ কারা মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এখন তদন্ত কাজ করছে।

পঞ্চগড়ের সন্তান পলাশ কুমার রায় (৩৬) ঢাকা বারের একজন অ্যাডভোকেট। একটি মানহানির মামলায় পঞ্চগড় জেলা কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় গত ২৬ এপ্রিল পেট্রোল বা কেরোসিন জাতীয় পদার্থের আগুনে তিনি দগ্ধ হন। ৩০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

কে বা কারা পলাশের গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়েছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছে। তবে পঞ্জগড় জেলা কারাকর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করছে।

এদিকে, এ ঘটনায় ঢাকার শাহবাগ থানায় প্রশাসন একটি অপমৃত্যুর মামলা করলেও পলাশের পরিবার এখনও মামলা করেনি।

কোহিনূর কেমিকেলসের আইন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা পলাশ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। কোম্পানির ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা হয়।

ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ মার্চ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশনে বসেন পলাশ। পরে জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধন করেন।

সেখানে হ্যান্ডমাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রশাসন ও পুলিশকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে পলাশকে আটক করে সদর থানার পুলিশ। পরে রাজীব রানা নামে একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পলাশের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷

কোহিনুরের মামলার শুনানির জন্য গত ২৬ এপ্রিল পলাশকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সকালে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

পলাশ কুমার রায়ের চাচাত ভাই অ্যাডভোকেট রাজেশ কুমার রায় বলেন, কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় পলাশের দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এরপর ঘটনা সম্পর্কে পরিবারকে না জানানোর বিষয়টিও রহস্যজনক। সবকিছু যেন কোনো অজ্ঞাত কারণে রহস্যাবৃত হয়ে আছে।

“আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করছি সেই তদন্তেই সবকিছু বের হয়ে আসবে এবং আমরা ন্যায় বিচার পাব।”

মামলার বিষয়ে পারিবারিকভাবে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

জনস্বার্থে করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৮ মে) হাই কোর্ট এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।    

পঞ্চগড় জেলা কারাগারের কারাধ্যক্ষ মুশফিকুর রহমান বলেন, পলাশ গত ২৬ মার্চ থেকে একটি মানহানির মামলায় জেলে আটক ছিলেন।

“সিরোসিস অর্থাইটিস রোগে ঠিকমত হাঁটাচলা করতে না পারায় তাকে কারা হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। কারাবিধি অনুযায়ী তাকে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া ও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।”

তার পরিবার থেকে এখন যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সেসবের কোনো ভিত্তি নেই, সত্যতা নেই। বিচার বিভাগীয় তদন্তেও এসব অসত্য বলে প্রমাণিত হবে বলে তার ভাষ্য।