ফণী: জেলায় জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঘুর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধানের আবাদ ক্ষতির মুখে পড়েছে। শত শত বাড়ি-ঘর, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। আমের ফলনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2019, 05:17 PM
Updated : 4 May 2019, 08:22 PM

বিভিন্ন জেলায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের সময় বজ্রপাতেও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

সাতক্ষীরা

উপকূলের কাঁচা ঘর-বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বিস্তীর্ণ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ছয়শ কাঁচা ঘর-বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলায় দুই হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা খামার বাড়ির ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাঠে থাকা দুই হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ৪১০ হেক্টর হিমসাগর, লেংড়া, গোপালভোগ, বোম্বাই আমের গাছ নষ্ট হয়েছে।

“ফণীর প্রভাবে ৪১০ হেক্টর আমের বাগান নষ্ট হওয়ায় বৈদেশিক বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। এমনিতেই এবার আমের ফলন অনেক কম ছিল। তার উপর ফণীর হানায় যে ক্ষতি হলো তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।”

নুরুল ইসলাম আরও বলেন, সবজি ক্ষেতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়। পটল ও বেগুন ক্ষেতে ফসল ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

কিন্তু উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষি অধিদপ্তরের জেলা রিপোর্টে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই জানা গেছে, বলেন তিনি। 

আশাশুনি উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর কুড়িকাউনিয়া ও প্রতাপনগর এবং দেবহাটা উপজেলার খানজিয়ার ইছামতী নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুরের কয়েকটি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ।

নওগাঁ

ফনীর প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের ইরিবোরো পাকা ও আধাপাকা ধান জমিতে শুইয়ে পড়েছে। এর ফলে কিছু কিছু পাকা ধান ঝড়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানিতে থাকা ধান গজিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন চাষিরা।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরা ধানের চাষ করা হয়েছে। ধানের ফলন ভালো।

“ফণীর প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার রানীনগর, আত্রাই, মহাদেবপুর, বদলগাছি, মান্দা.নওগাঁ সদর, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর  পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা ধান শুইয়ে পড়েছে।”

তবে ফণীর কারণে আম, পাট বা শাকসব্জির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।

মাসুদুর রহমান আরও বলেন, শুক্রবার বৃষ্টি শুরুর পর থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নওগাঁয় ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জোঁকের ভয়ে ধানা কাটায় সমস্যা

নওগাঁ সদরের চক পাথুরিয়া গ্রামের বোরো চাষি আজিজুল হক বলেন, ফণীর কারণে কিছু ধান তো ঝড়ে পড়েছেই। এখন জমিতে পানি জমে আছে।

“জোঁকের ভয়ে কেউ ধান কাটছে চাইছে না। কাটতে রাজি হলে জমির পানিতে জোঁক থাকার কারণে প্রতিবিঘায় এখন ৪ হাজারের স্থলে ৬ হাজার টাকা দাবি করছেন শ্রমিকরা। এরপরও পর্যাপ্ত ধানকাটা শ্রমিক না থাকায় অধিকাংশ পাকা ধান জমিতেই পড়ে থাকছে।”

তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোরা চাষ করেছিলেন, কিন্তু এখনও অর্ধেক জমির ধান কাটতে পারেননি বলে জানান।

নওগাঁ সদরের চকপাথুরিয়া গ্রামের বোরোর জমিতে পানি জমে থাকায় মোজা পায়ে দিয়ে ধান কাটতে দেখা গেল শ্রমিকদের।

ধানকাটা অবস্থায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শ্রমিক আব্দুর মতিন জানান, “জমিতে অনেক জোঁক তাই মোজা পায়ে ধান কাটছি। কিন্ত কাদা পানির কারণে কাজ এগুচ্ছে না। ক্ষতি পোষাতে একটু বেশি মজুরি নিতে হচ্ছে আমাদের।”

রানীনগর উপজেলার কৃষক গুলজার হোসেন বলেন, তার ৫ বিঘা জমির ধান ফণীর কারণে মাটিতে শুইয়ে পড়েছে। এখন ধান কোনো শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

মান্দার  পাজর ভাঙা এলাকার বোরো চাষি কাজী কামাল বলেন, ফণী জানমালের ক্ষতি করতে না পারলেও ধানের কৃষকের ক্ষতি করেছে। ধান শুইয়ে পড়ায় ও জমিতে পানি থাকায় কাটা মাড়াই খরচ প্রতি বিঘায় বাড়বে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। যে সব শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটতে এসেছিল তারাও জোঁকের ভয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

একই উপজেলার বরুনকান্দি গ্রামের কৃষক সোয়াইব হোসেন বলেন, গত ২/৩ দিন কৃষি বিভাগ মাইকিং করেছিল পাকা ধান কেটে নেওয়ার জন্য। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন তো আরও শ্রমিক সংকট দেখা দেবে। জোঁকের ভয়ে কেউ ধান কাটতে চাইছে না। মজুরি আগের চেয়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে।

জয়পুরহাট

ফণীর প্রভাবে জয়পুরহাটে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অপরদিকে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বেড়েছে জনদূর্ভোগ।

সদর উপজেলার ধারকি গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, “ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে ধান কাটতে পারিনি। ৩ বিঘা পাকা ধানের জমিতে পানি জমেছে। আমাদের মাঠে অনেকের ক্ষেতের ধান নুয়ে পড়ায় ধানের ফলন কম হবে।”

আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম, কালাই উপজেলার বিয়ালা গ্রামের কৃষক আব্দুল করিমসহ জেলার অনেক কৃষক জানান, উঁচু-নিচু সব জমিতেই পানি জমেছে। অনেকের ক্ষেতের ধান এখনও কাঁচা-পাকা ধান কাটতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

এ সময় আকস্মিক ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান গাছের গোড়া থেকে ভেঙে পড়েছে। এছাড়া পাঠ, শাক-সবজি ক্ষেতেরও ক্ষতি হওয়ায় আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, জেলায় এবার ৭২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ হয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে পাঠ, শাক-সবজি অন্যান্য ফসল। 

“ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনসহ কৃষকদের সহায়তা দানের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে।”

ফেনী

ফেনীর সোনাগাজীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। গাছপালা পড়ে আহত হয়েছে অন্তত চারজন।

সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে চরচান্দিয়া, দক্ষিণ চরচান্দিয়া, জলদাস পাড়া, জেলে পাড়াসহ একাধিক এলাকায় অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এসময় কাঁচা ঘর-বাড়ি হেলে পড়ে, বাড়ির টিনের চাল উপড়ে পড়ে। ঘরের মালামাল নষ্ট হয়।

ভোর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে পুরো উপজেলায়। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

দুপুর ১২টার দিকে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ধান গবেষণা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার লাইলী আক্তার, জান্নাতুর লাহের, আছিয়া খাতুন, আনিছুল হক, রেজাউল হক, আবু সুফিয়ান, আলাউদ্দিন, নুরের নবী, বেলাল হোসেন, বেবি আক্তার, আবুল কাশেমসহ অন্তত ৩০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দক্ষিন চরচান্দিয়া গ্রামের আলেয়া বেগম বলেন, হঠাৎ ঝড়ে তার ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরের সব মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

জলদাস পড়া গ্রামের মোহন দাস বলেন, ঝড়ে তার ঘরের চাল উপড়ে নিয়ে গেছে। ঘরের আলমিরাসহ সকল মালামাল পার্শ্ববর্তী ডোবায় পড়ে রয়েছে।

ওই এলাকার হরিপদ দাস, হরেন্দ্র দাস, যুধিষ্ঠি দাসসহ অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (এনডিসি) রাশেদুজ্জামান বলেন, সোনাগাজীতে সাতটি বসতঘর সম্পূর্ণ, ৬৭টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

“প্রায় ১৫শ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল পারভেজ বলেন, শনিবার দুপুরের পর থেকে চরচান্দিয়া, চরদরবেশ, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেছে মানুষজন।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (কারিগরি) আবদুল জলিল মিয়া বলেন, ঝড়ো বাতাসে ছয়টি উপজেলায় ১৭টি বৈদ্যতিক খুঁটি ও প্রায় ৬০টি এলাকায় বৈদ্যতিক তার ছিঁড়ে গেছে। জেলায় ভোর থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।

জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তার জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হছে। এরপরই তাদের পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে।

সোনাগাজী উপজেলা ছাড়াও ঝড়ে দাগনভূইয়া উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে অন্তত ১০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে পাঁচটি বিদ্যুতিক খুঁটি। ফুলাগাজী উপজেলায় অন্তত ১১টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১২ একর ফসলি জমির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। গাছের ডাল-পালা ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলা সদর ছাড়া ৫ উপজেলায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

গাইবান্ধা

গাইবান্ধার সর্বত্র শনিবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে বয়ে যায় হিমেল হাওয়া। ঝড়ো হাওয়ার কারণে গোটা জেলায় অসংখ্য গাছপালা ভেঙে যায় ও উপড়ে পড়ে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল থেকে দিনভর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।

গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জানায়, গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন ক্রটিপুর্ণ হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, বৃষ্টির কারণে রবি ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তবে বোরো কর্তন মৌসুমে ধান মাড়াই নিয়ে কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েন।

এদিকে এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন দিনমজুররা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় গ্রামের দিনমজুর বাবলু মিয়া বলেন, “দিনমজুরের কাজ করে আমাদের সংসার চলে। শুক্রবার ও শনিবার বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে পারিনি। ধারদেনা করে চাল ডাল কিনেছি।”

একই গ্রামের দবির উদ্দিন গাইবান্ধা শহরে রিকশা চালান।

তিনি বলেন, “সকালে বৃষ্টির জন্য ঘর থেকে বেরুতে পারিনি। এ কারণে সকাল থেকেই হাট-বাজারে লোকজনের উপস্থিতিও ছিল কম।”

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বর্ষণ, নদীর পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সময় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ কারণে গত দুইদিনের বৃষ্টির ফলে নদী ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার পাঁচটি গ্রামের অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

ফরিদপুর

ফরিদপুরের দুটি উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ২৮টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে দেড় শতাধিক গাছ।

শুক্রবার বিকালে মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ও রাতে সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে এ ঝড় বয়ে যায়।

ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর, ফতেপুর, ভবানীপুর ও চক ভবানীপুর গ্রমে শুক্রবার রাতে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ১৮টি টিনের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। এছাড়া ওই চারটি গ্রামে লিচু ও আমগাছসহ অন্তত শতাধিক গাছ উপড়ে গেছে।

ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মজনু বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। এ বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে সোয়া ৪টার মধ্যে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। এর ফলে ৮টি টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে গেছে অর্ধশত গাছ।

এলাকাবাসীরা জানায়, ইউনিয়নের আখড়া এলাকা থেকে ঝড় শুরু হয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, দারগা বাড়ি ও চর মোনহরদী গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা মো. ইছাহাক বলেন, ঝড় শুরু হওয়ার পর মূহূর্তের মধ্যে সব লন্ডভন্ড করে দেয়। তবে প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মনোয়ার বলেন, ঝড়ের পর থেকেই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করার কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ বাড়ির টিনের চাল উড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে ঘরের খাম্বাগুলি অক্ষত রয়েছে। ঝড়ে অর্ধশত লিচু ও আম গাছ উপড়ে গেছে।

ইউএনও মোস্তফা মনোয়ার আরও বলেন, খবর পাওয়ার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছেন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সরকারি উদ্যোগে প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রোকসানা রহমান বলেন, দ্রত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পুনর্বাসন কাজ শুরু করা হবে। যাদের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের টিন দেওয়া হবে। যাদের খাদ্যের প্রয়োজন তাদের খাবার দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভান্ডারে প্রয়োজনীয় টিন ও খাবার মজুদ রয়েছে।

গাজীপুর

গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুতের ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কে হেলে পড়ে গেছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জেলা পুলিশ লাইনের সামনে ব্রি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের কাছে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে এ খুঁটিগুলো হেলে পড়ে। এতে ওই সড়কে যানচলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার যুবরাজ চন্দ্র পাল জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রচণ্ড ঝড়ে সড়কের পাশে ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ে। এতে ব্রি সাব-স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়।

তিনি আরও বলেন, এ খুঁটিগুলোতে ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ছিল। খুঁটিগুলোর পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য নালা তৈরি করা হয়েছে কিছু দিন আগে। বৃষ্টির পানিতে খুঁটির নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় প্রচণ্ড বাতাসে খুঁটিগুলো হেলে রাস্তার উপর পড়েছে।

ঘটনার পর থেকেই হেলেপড়া ওই খুঁটিগুলো ক্রেন দিয়ে দাঁড় করিয়ে এবং অন্য খুঁটির মাধ্যমে সাপোর্ট দিয়ে রাখছে পল্লি বিদ্যুতের কর্মীরা।

নোয়াখালী

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে; ঘরচাপা পড়ে নিহত হয়েছে একটি শিশু।

ফণীর কারণে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার ভারতের ওড়িষা উপকূলে আঘাত হেনে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় থেকে নোয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে।

এর মধ্যেই শনিবার ভোররাতে ঝড়ে সুবর্ণচরে শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয় বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে প্রচণ্ড ঝড়ে গাছপালা ও শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ঘরচাপা পড়ে চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে এক শিশু নিহত হয়।”

নিহত মো. ইসমাইল (২) চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।

ঝড়ে চর জব্বর ইউনিয়নে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। তাদের সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।