ফণী: আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে উপকূলের বাসিন্দাদের

ঘূর্ণীঝড় ফণী বাংলাদেশে আসার আগেই উপকূলীয় জেলাগুলোর নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

নিউজ ডেস্ক.বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2019, 08:22 AM
Updated : 3 May 2019, 10:45 AM

শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে ২১ থেকে ২৫ লাখ মানুষকে দেশের ১৯ জেলার চার হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার গতির ঝেড়ো হাওয়া নিয়ে শুক্রবার সকালে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করা ফণী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসছে। শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে এ ঝড় খুলনা অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। 

এদিকে ফণীর প্রভাবে খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারে।

আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া শুরু হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে।

জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলায় ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

কয়রায় ১হাজার ৯৫ জন ও দাকোপ উপজেলায় ১ হাজার ৩৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবকসহ মোট দুই হাজার ৪৬০জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং নয়টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে চলছে মাইকিং।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের কাছে ৪৫৬ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৮ লাখ ৩২হাজার টাকা এবং ৩ লাখ ২৫হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১২০টি মেডিকেল টিম।

দুর্যোগ পরবর্র্তী সময়ের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

রাজশাহী

রাজশাহীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে দুর্গত মানুষদের জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রস্তুতি সভায়।

জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার ও খাদ্যশস্য মজুদ রাখতে বলা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে।

এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিসি।

তিনি বলেন, দুর্যোগকালে ও পরবর্তী সময়ে যে কোনো তথ্য সহায়তার জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে। যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে ১০৯০ ডায়াল করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা ও জানানো যাবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমীন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা জুলফিকার মো. আকতার হোসেন, ডিডি বিআরডিবি একেএম জাকিরুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক রাশেদুল কবীর, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শবনম শিরিন, পবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন আবু বাশির প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরা

ফণীর প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ও আশাশুনিতে শুরু হয়েছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি; হালকা হাওয়ার সঙ্গে নদীতে দেখা দিয়েছে উত্তাল ঢেউ।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাতক্ষীরার উপকীলবর্তী সহস্রাধিক মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  ১৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র আরও মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।

এছাড়া ১১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সব উপজেলায় প্রয়োজনীয় অ্যাম্বুলেন্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জেলা কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ফণীর প্রভাব ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মৃদু ঝরো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত চলছে জেলায়।

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল জানান, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ঢেউয়ে দুর্গাবাটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিছু গ্রামে পানি ঢোকার খবর পাওয়া গেছে। 

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরে ঘূর্নীঝড় ফণী মোকাবিলায় ২৯৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান জানান।

তিনি বলেন, রেডক্রিসেন্টের এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক উপকূলের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করছেন। পাঁচ হাজার মানুষের জন্য শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া দুপুর থেকে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঢেউ দেখা গেছে বলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান।

বাগেরহাট

বাগেরহাটের সুন্দরবন শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার নদী তীরের বাসিন্দাদের শুক্রবার দুপুর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট ও রোবার স্কাউটের প্রায় দুই হাজার সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এসব এলাকার প্রায় চারশ আশ্রয়কেন্দ্রে ছয় হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শরণখোলা ও মোংলা উপজেলাতে ত্রিশ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

চাঁদপুর

ফণী মোকাবিলায় চাঁদপুরে ৩১১টি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি এক হাজার ১৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৯১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রেখেছে জেলা প্রশাসন।

দুর্যোগে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি সদস্যদের প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ত্রাণও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১১৭টি মেডিকেল টিম।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম জানান, বৃহস্পতিবার চরাঞ্চলে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর থেকেই গাজীপুর, হাইমচর, নীলকমল ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, তার উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন এখনও  আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। তাদের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানান।