ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি সাগর তীরের লোকজনকে সরিয়ে নিতে শুরু হয়েছে মাইকিং। মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে দেশের ভেতরেও সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ।
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
চট্টগ্রাম
জেলা প্রশাসন ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের পর ফণী মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলার উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় সমুদ্র তীরবর্তী লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং, সাইক্লোন সেন্টারসমূহ প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফণী মোকাবেলায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
মেডিকেল টিম গঠনসহ অন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় বিশেষ করে সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, আনোয়ারা এলাকায় ইতোমধ্যে মাইকিং চলছে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার জন্য।”
এছাড়া উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় পাকা ধান কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ভোলা
জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলার সাত উপজেলা ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুধবার থেকে চরগুলোয় সতর্কতামূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দুই দফা বৈঠক হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতিবিষয়ক একাধিক সভা করা হয়েছে।
সিপিপির উপ-পরিচালক সাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, জেলায় ৬৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
ভোলার সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ রায় জানান, তিনি বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজে গিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন। ২২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় স্যালাইন, গজ-ব্যান্ডেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৩২টি মাটির কিল্লা ও সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
ইতোমধ্যে রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর নৌযান চলাচল বন্ধের এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
চাঁদপুরে আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও দুপুর পর্যন্ত রোদ দেখা গেছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণি মোকাবেলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই জরুরি সভা হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা নৌযান শ্রমিক লীগ সভাপতি বিপ্লব সরকার বলেন, চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী এবং দেশের বিভিন্ন নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিটিএ। বেলা ১১টার পর চাঁদপুর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
কক্সবাজার
ফণী মোকাবিলায় কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় কক্সবাজারে ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে সাড়ে চার লাখ মানুষ থাকতে পারবে। এছাড়া আট উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ছয় হাজার ৪৫০ কর্মী। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আছেন ১৭০০ জন। ৩০ ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করবেন তারা। আর রেটক্রিসেন্টের রয়েছেন ১২ শতাধিক কর্মী। তারা পাঁচটি ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করবেন। এছাড়া সিভিল সার্জন কর্যালয়ের পক্ষ থেকে ৮৯টি দল গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকা থেকে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাঠানো হয়েছে ২০ জন চিকিৎসক। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের চারটি বিশেষ ইউনিট ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছয়টি ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
পিরোজপুর
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলায় ১৯৩টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত করাসহ সেখানে জনগণকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় জেলা তথ্য অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। দুযোর্গের সময় মানুষকে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।