রোববার রাতে শামীমকে নিয়ে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ভূঞা বাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলম জানান, শাহাদাত হোসেন শামীমকে নিয়ে তার বাড়ি ও ভূঞাবাজারের দোকানে অভিযান চালিয়ে একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এ সময় বেশ কিছু নথিপত্রও জব্দ করা হয়।
গত ১৪ এপ্রিল শামীম আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
শাহাদাত হোসেন শামীমকে গত ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তিনি নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত ৩ সপ্তাহেও শেষ হয়নি
নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ফেনী জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির কাজ তিন সপ্তাহেও শেষ হয়নি। এর মধ্যে তিন দফায় তদন্তকাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালানা কমিটির সভাপতি ও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিমকে এই কমিটির প্রধান করে গত ৭ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (এইউএনও) সোহেল পারভেজ ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্যাহকে সদস্য করা হয়।
কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। তিন কার্যদিবস শেষ হলেও কাজ শুরুই করতে না পরায় গত ১০ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর তদনস্ত কমিটির প্রধান এনামুল করিম আরও সাত দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। পরে জেলা প্রশাসক সাত কার্যদিবস মেয়াদ বাড়ান।
সে মেয়াদে প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারায় কমিটি আরও সময় বাড়ানোর আবেদন করে। জেলা প্রশাসক আরও চার দিন সময় বাড়ান, সে মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২১ এপ্রিল। এখনও কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
এ বিষয়ে কমিটির প্রধান পি কে এম এনামুল করিম বলেন, তদন্তকাজ শেষ করা হলেও নানা ব্যস্ততায় প্রতিবেদন তৈরি এখনও সম্ভব হয়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তদন্তদলের প্রধান একটি প্রশিক্ষণে জেলার বাইরে অবস্থান করায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে জানানো হবে।
হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার বিচার দাবিতে সোনাগাজীতে কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার সকালে সোনাগাজীর চরমজলিশপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারী সিরাজউদ্দৌলাসহ সকল আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ১০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলা এজহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত ৫ জনসহ ৯ জন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।