বৃহস্পতিবার ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানি।
বাদীর আইনজীবী শাহাজাহান সাজু বলেন, শাহাদাত হোসেন শামীম এর আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তা যাচাই করার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলম তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন বলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতের (রিমান্ড) আবেদন করেন। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
গত ১৪ এপ্রিল শাহাদাত হোসেন নুসরাত হত্যা মামলায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শাহাদাত হোসেন শামীমকে গত ১২ এপ্রিল সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
এদিকে, নুসরাহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালানা পর্ষদের সহ-সভাপতি (সদ্য বাতিলকৃত) রুহল আমিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানি বলেন, রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার রুহুল আমিনকে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
গত ২০ এপ্রিল থেকে ৫ দিনের রিমান্ডে ছিলেন রুহুল আমিন। ১৯ এপ্রিল রুহুল আমিনকে সোনাগাজীর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী বলেন, রুহুল আমিনকে রিমান্ড শেষে দুপুর আড়াইটার সময় আদালত হাজতখানায় আনা হয়। কিন্তু তাকে হাজতখানায় না রেখে আদালত পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানির বাসার কক্ষে রুহুল আমিনকে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। একঘণ্টা পর তাকে গোলাম জিলানির কক্ষ থেকে বের করে আদালতে না তুলেই পিবিআই-এর গাড়িতে তুলে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে আদালত পুলিশের পরিদর্শক গোলাম জিলানির কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজজামান বলেন, “আমি তো আদালতে ছিলাম না, আপনারা এ বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলমের কাছ থেকে যেনে নিতে পারেন।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহাজাহান সাজু বলেন, বৃহস্পতিবার আসামি রুহুল আমিনকে আদালত হাজতখানায় আনলেও রিমান্ডের নথি (কাগজ/পত্র) কোর্ট পুলিশ আদালতের বিচারক থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আসায় আসামিকে এজলাসে তোলার প্রয়োজন পড়েনি। তবে আদালতে সকল আসামিই সমান, আদালতে কারো রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করা ঠিক না।
নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ অব্যাহত
নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী সদরের শর্শদী ইউনিয়ন ও মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রম মহাসড়কে মোহাম্মদ আলী বাজারে সানিডেল প্রিপারেটরি হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা হাতে প্লেকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা প্লেকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে খুনি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ সকল আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। নুসরাতের মতো আর কোনো মেয়েকে এভাবে যেন পরিণতি বরণ না করতে হয় সেজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
মানববন্ধনে শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, স্কুলের দাতা সদস্য তবারক উল্যাহ চৌধুরী বায়জীদ, শর্শদী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাফর উল্যাহসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
ওসি মোয়াজ্জেমের মামলা তদন্তে সোনাগাজীতে পিবিআই
নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা তদন্তে সোনাগাজীতে এসেছে তদন্ত দল।
ফেনী পিবিআই কার্যালয়ে বুধবার রাত ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, তার নেতৃত্বে একটি দল সোনাগাজীতে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী ছায়েদুল হক সুমনের দায়ের করা মামলা তদন্তের প্রথম দিন সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন, সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের এসআই করিমুল হকের বক্তব্য গ্রহণ করেন।
সোনাগাজীতে তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিমা সুলতানা বলেন, “আমরা বুধবার থানার কার্যক্রম শেষ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”
গত ২৭ মার্চ নুসরাত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে সেখানে ওসি নুসরাতকে ধমক দেন এবং তার মোবাইল ফোনে নুসরাতের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করার পর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হইচই শুরু হয়।
এই ঘটনায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ব্যারিস্টার ছায়েদুল হক সুমন। ওই মামলা তদন্তের স্বার্থে মোয়াজ্জেমের ব্যবহৃত দুটি ফোন ইতিমধ্যে জব্দ করেছে পিবিআই।