স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়ায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

ফেনীর পর এবার লক্ষ্মীপুরে এক তরুণীর গায়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যিনি স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিসাইফুল তসলিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2019, 06:16 PM
Updated : 21 April 2019, 06:39 PM

কমলনগর উপজেলার পাটারিরহাট এলাকায় রোববার এ ঘটনা ঘটে বলে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন জানান।

অগ্নিদগ্ধ তরুণীকে (২২) লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

এসপি মাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সফিউজ্জামান ভূঁইয়াসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান।

তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নতুনহাট এলাকার সোনাগাজী গ্রামে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, অগ্নিদগ্ধ তরুণীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পুলিশের দায়িত্বে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

“মেয়েটির শরীরের প্রায় ৪০/৪২ ভাগ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালীতেও প্রদাহ হয়েছে।”

সদর হাসপাতালে মেয়েটি সংবাদকর্মীদের বলেন, দুই বছর আগে মোবাইল ফোনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটারীরহাট এলাকার মোহর আলীর ছেলে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার প্রেম হয় এবং এর কয়েকমাস পরে রাউজানে তাদের বিয়ে হয়।

বিয়ের পর থেকে তার স্বামী এক বছর শ্বশুরালয়ে আসা-যাওয়া করলেও স্ত্রীকে কখনোই নিজের বাড়ি নেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি বলে মেয়েটির ভাষ্য।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে তিনি শ্বশুরবাড়ি আসার তাগিদ দিলেও তাতে সাড়া দেননি স্বামী সালাহ্ উদ্দিন। এ অবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে গত শুক্রবার রাতে তিনি একাই ছুটে আসেন স্বামীর বাড়ি।

তার ভাষ্য, সেখানে এসে দেখতে পান সলাহ্ উদ্দিন দুই সন্তানসহ অন্য স্ত্রী নিয়ে অনেক আগে থেকেই এখানে সংসার করছেন।

এখানে নিজেকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলে সালাহ্ উদ্দিন তা অস্বীকার করেন। এরপর তিনি স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ের আশায় গত দুদিন ধরে এলাকায় বিভিন্নজনের কাছে ধর্না দেন বলে জানান।  

বিষয়টি তিনি স্থানীয় চরফলকন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. হাফিজ উল্যা ও গ্রাম পুলিশ আবু তাহেরকে জানান। তারা বিষয়টি সুরাহা করে দিবে বলে দুদিন সময়ক্ষেপণ করেন বলে মেয়েটি অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “এ অবস্থায় আজ (রোববার) বিকালে ওই প্রতারক স্বামী তাদের বাড়ির পাশের একটি সয়াবিন ক্ষেতে আমাকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।”

ইউপি সদস্য হাফিজ উল্যা বলেন, স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়া যুবতীর কাছে বিয়ের কাগজপত্র তলব করা হয়। এ সময় মেয়েটি তার সংগ্রহে কোনো কাগজপত্র নেই বলে জানান।

“আজ দুপুরে তাকে কাগজপত্র নিয়ে ফেরত আসার কথা বলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, “ফিরিয়ে দেওয়ার কিছু সময় পরেই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখান থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেই।”

হাফিজ বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছে যুবতীটি নিজেই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন। গায়ে আগুন ছড়িয়ে পড়লে পাশের এক বাড়িতে গামলার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়েন।”

এসপি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে পুলিশের দায়িত্বে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত চলছে।

মেয়েটির বাড়ি চট্টগ্রামে; এখানে তার কোনো আত্মীয়স্বজন নাই। তাই পুলিশের একজন এএসআই, একজন নারী ও একজন পুরুষ কনস্টেবল দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে এসপি জানান।

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেয় মুখোশধারী কয়েকজন তরুণ-তরুণী। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

সোনাগাজী সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করায় নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয় বলে মৃত্যুর আগে তিনি বলে যান। হত্যার জন্য তার গায়ে আগুন দেওয়ার দায় স্বীকার করে ৮ আসামি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।