নুসরাত হত্যা: ‘দোষ স্বীকার করে’ নূর উদ্দিন ও শামীমের জবানবন্দি

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় ‘সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে’ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এজহারভুক্ত দুই আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2019, 05:09 AM
Updated : 15 April 2019, 06:04 AM

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান জানান, দুই আসামি রোববার মধ্যরাতে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

নূর ও শামীমকে আদালতে হাজির করা হয় রোববার বিকাল ৩টায়। এরপর তাদের জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেন বিচারক, তা চলে রাত ১টা পর্যন্ত।

তাহেরুল হক চৌহান বলেন, “আদালত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের জবানবন্দি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। আসামি দুজন আদালতের কাছে তাদের স্বীকারোক্তি উপস্থাপন করেন।”

সেখানে তারা পুরো ঘটনা স্পষ্ট করেছেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তারা কারাগারে থাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার কাছ থেকে হুকুম পেয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। এ সময় তাদের সাথে কারা ছিলো, কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, বিষয়গুলো জবানবন্দিতে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই গণমাধ্যমকে জানানো হচ্ছে না।”

ঢাকার হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ নুসরাত; পাঁচ দিন পর মৃত্যু হয় তার

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন নুসরাত। গত ২৬ মার্চ নুসরাতের মা শিরীনা আক্তার মামলা করার পরদিন সিরাজকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

ওই মামলা প্রত্যাহার না করায় ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার হল থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয় বোরখা পরা চারজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান।

দুই বছর আগে দাখিল পরীক্ষার সময়ও আক্রান্ত হয়েছিলেন নুসরাত। তখন তার চোখে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মারা হয়েছিল। ওই ঘটনাতেও অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নূর উদ্দিনকে সন্দেহ করা হয়।

ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের নূর উদ্দিনকে শুক্রবার ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। আর শাহাদাত হোসেন শামীমকে শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুক্রবার যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা।

পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মোট ১৩ জন জড়িত ছিলেন, যাদের মধ্যে অন্তত দুজন ছাত্রী। তাদের একজন অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি।

আর মাদ্রাসার ছাদে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার সময় বোরকা পরা যে চারজন ছিলেন, তাদের একজন শামীম বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

শামীম এক সময় প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন নুসরাতকে, কিন্তু নুসরাত সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে জানান বনজ কুমার।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “তারা দুটি কারণে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করে। এর একটি হচ্ছে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করে আলেম সমাজকে হেয় করা। আর অপরটি হচ্ছে শাহাদত হোসেন শামীমের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা।”