নববর্ষে সোহাগপুরের শহীদজায়াদের সংবর্ধনা

বর্ষবরণ উপলক্ষে শেরপুরের সোহাগপুরের বিধবপল্লির শহীদজায়াদের সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা পুলিশ। 

শেরপুর প্রতিনিধিআব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2019, 04:20 PM
Updated : 14 April 2019, 04:20 PM

তাদের নানা রকমের খাবার, কাপড় ও উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়। ডাক্তার দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।  

এছাড়া কয়েকশ শিশু তাদের সম্মান জানিয়ে নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শহীদজায়ারা জেলা পুলিশের এই আয়োজনে অভিভূত। স্বাধীনতার পর এমন সম্মান তারা আর পাননি বলে মন্তব্য করেন।

“স্বামী-সন্তান হারানোর পরে গত ৪৮ বছর আমরা পহেলা বৈশাখ কী বুঝি নাই। এই বছর পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পুলিশ ভাইয়েরা আমগরে বাড়িতে গিয়া বড় বড় রুই-কাতলা মাছ দিয়া আইছে। টেহা (টাকা) দিছে, কাপড় দিছে। আইজ গাড়িতে কইরা শেরপুর নিয়া আইছে। বড় ডাক্তর আমগরে দেখল। ওষুধ দিল। হাজার হাজার শিশু আমগরে দাঁড়ায়া সম্মান দিল। ভাল খাওয়ন পাইলাম। খুব খুশি লাগতাছে। মনে হইতাছে অনেকদিন পরে স্বাধীনতার স্বাদ পাইতাছি।”

শেরপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ষবরণ উপলক্ষে শহীদজায়াদের সংবর্ধনা ও বৈশাখী শিশু উৎসবে অংশ নিতে এসে এভাবেই নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করলেন বিধবাপল্লির শহীদজায়া হাফিজা বেওয়া (৬৬)।

১৯৭১ এর ২৫ জুলাই সোহাগপুর গণহত্যায় হাফিজা স্বামী-সন্তান-দেবরসহ পরিবারের আট সদস্যকে হারিয়েছেন। সেদিন ওই গ্রামের ১৮৭ জনকে হত্যা করা হয়।

১৪২৬ বাংলা সনকে বরণ করতে রোববার এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ আলেয়া ফেরদৌসী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। এদিন ২১ শহীদ জায়াকে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধনা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

বৈশাখী শিশু উৎসবে জেলা সদরের ২১টি মাধ্যমিক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষক অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধ ও সোহাগপুর গণহত্যায় শহীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সোহাগপুরের পৈশাচিক গণহত্যায় নিহত শহীদজায়াদের করুণ ইতিহাস অভিনয় করে দেখায় স্কুল শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে আসে।

শিশু উৎসবে শিশুরা নাচ-গান-আবৃত্তি-রম্য বিতর্ক, লোকজ,-আদিবাসী সম্প্রদায়ের নৃত্য ও গান, যেমন খুশি তেমন সাজ, সার্কাস ও সাপ খেলাসহ নানা ধরনের আয়োজন অংশ নেয়। চমৎকার এ আয়োজনকে ঘিরে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ লাইনস মাঠ ছিল উৎসবমূখর।

এর আগে উপস্থিত সকল শিশুদের নাড়ু-মুড়ি, জিলিপি, বাতাসা ও আইসক্রিম দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

বিকালে জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, মূখ্য বিচারিক হাকিম সুদীপ্ত দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল বক্তব্য রাখেন।

উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) বিল্লাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

অনুষ্ঠান আয়োজনে সহয়োগিতা করে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ও ডিস্ট্রিক্ট ডিবেট ফেডারেশন।

এ আয়োজন সর্ম্পকে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, “বাঙালির অস্তিত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা আমাদের প্রিয় দেশ পেতাম না। দেশ স্বাধীন না হলে পহেলা বৈশাখ পালনের কথা আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না। 

“শহীদদের কাছে আমরা ঋণী। সেই দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশ বিভাগ ভিন্নধর্মী বর্ষবরণের ব্যবস্থা করেছে।”

হুইপ আতিউর রহমান আতিক বলেন, পুলিশ বিভাগের এ আয়োজনে সবাই মুগ্ধ হয়েছে। এ ধরনের আয়োজন শিশুদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।  তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।