ফরিদপুরে বেড়িবাঁধ খালের বিপুল জমি বেদখল

ফরিদপুর শহররক্ষা বাঁধ থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মহাসড়ক পর্যন্ত বেড়িবাঁধ খালের ১৫ কিলোমিটার এলাকা বিভিন্ন ইটভাটা মালিক ও প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2019, 12:03 PM
Updated : 14 April 2019, 12:03 PM

ফলে খালটিতে আসা পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর ইউনিয়নের মনোডাঙ্গী এলাকায় পদ্মা নদী এই খালের উৎস মুখ। এখানে বাঁধ নির্মাণ করায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বেড়িবাঁধ খাল।

এতে খাল পাড়ের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সমস্যার কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিলন পাল, মুজিবুর মাতুব্বর, ওয়াহিদ মিয়া কুটি, আব্দুল লতিফ মিয়া, মহসীন শরীফ, শাহজাহান, খলিফা কামাল, সরোয়ার হোসেন, জলিল খান, রেজওয়ান মোল্যাসহ ২৫ জন মালিকের ৩৭টি ইটভাটার মালিক নিয়মনীতি না মেনে ভাটায় ট্রাক প্রবেশের জন্য ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করেছেন। রাস্তার জায়গা নেওয়া হয়েছে খাল থেকে।

এভাবে খালের সরকারি জমি দখল করে ব্যক্তিগত ইটভাটায় যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অথচ এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তারা তো কোনো কিছু করতে পারছেনই না; প্রশাসন থেকেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ হয়েছেন। 

স্থানীয় চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের কৃষক কামরুল মাতুব্বর বলেন, “সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালটি ইটভাটার মালিকরা রাস্তা নির্মাণ করে দখল করেছে। সরকারি জায়গা তো সাধারণের দখলের জন্য না। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার বিষয়গুলো সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা দেখবেন না?” 

ডিগ্রীরচরের অটোরিকশা চালক রফিকুল মন্ডল বলেন, বেড়িবাঁধের এই খাল অনেক চওড়া ছিল, নৌকা চলাচল করত, খালের পানি সেচ দিয়ে ফসলের মাঠে নেওয়া হতো। এখন তো পানিই নেই খালে।

“পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে খালটি স্থানে স্থানে এখন ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে।”

স্থানীয় কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “যে জমিতে ফসল ফলাতাম সেটি এখন ইটভাটা। তারপর বাকি যে জায়গাটুকু আছে তাতেও কৃষিকাজ করা যাচ্ছে না। আগে এই খালের পানি দিয়েই সেচের কাজ চলত। এখন তো ভাটা মালিকেরা খাল বন্ধ করে দিয়ে রাস্তা বানিয়েছে।”

ফরিদপুরের সংস্কৃতিকর্মী আবুল কাশেম বলেন, “কীভাবে এই খালটি দখল হলো তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের এখনই খেয়াল করা দরকার। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে খালটি দখলমুক্ত করতে হবে।”

মুজিবর মাতুব্বর নামে এক ইটভাটা মালিকের দাবি, “খালের উপর প্রত্যেক ইটভাটা মালিক যে অংশটুকু ভরাট করেছে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ থেকে লিজ নেওয়া।”

তবে তার এই বক্তব্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেনি।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “ইটভাটা মালিককে খাল বন্ধ করে রাস্তা করার জন্য কোনো জমি লিজ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমাদের নজরে ছিল না। এই বিষয়ে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”