বাংলা নববর্ষের দিন মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক সহপাঠী আর শিক্ষকদের সামনে পেয়ে তিনি মেলে ধরলেন স্মৃতির ঝাঁপি।
১৯৯৯ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস পাস করা ডা. শেরিং আজকের শিক্ষার্থীদের বাংলায় বলেন, “ভালো চিকিৎসক হতে হলে আগে একটা ভালো মানুষ হইতে হবে ভাই। তা না হলে… মাঠ ভালো না হলে যাই রোপি (রোপণ করি) না কেন কিছু উঠবে না সেখানে।”
৫১ বছর বয়সী লোটে শেরিং চিকিৎসা শাস্ত্রে লেখাপড়া করার জন্য তারুণ্যে প্রায় এক যুগ সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশে। ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে এমবিবিএস করার পর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্জারিতে নিয়েছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
দেশে ফিরে প্রায় এক দশক চিকিৎসকের পেশায় নিয়োজিত থাকার পর ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন ডা. শেরিং। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার দল ড্রাক নামরূপ শকবা চমক সৃষ্টি করে, নভেম্বরে তিনি হন ভুটানের নতুন প্রধানমন্ত্রী।
নিজের দেশে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার নিজের পুরনো বিদ্যাপীঠে ফেরা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দারুণ রোমাঞ্চিত ছিলেন লোটে শেরিং। রোববার সকালে ঢাকায় বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানেও তিনি সে কথা বলেন।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড পরিদর্শন করার পর ডা. শেরিং যোগ দেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। চিকিৎসক থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার একটি ব্যাখ্যাও তিনি সেখানে দেন।
আবেগ মাখা বক্তৃতায় বাংলা আর ইংরেজি মিশিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি কিন্তু আমার পেশা ছেড়ে রাজনীতিতে আসিনি। বরং এই পেশাকে গভীরভাবে ভালোবাসি বলেই রাজনীতিতে এসেছি।
“পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত ভুটানেও প্রচুর পলিসি ইস্যু রয়েছে- কী করা যাবে আর কী করা যাবে না… সেটা যাতে আমরা ভালোভাবে করতে পারি আর কি। নিয়ম কানুন কেমন হলে মানুষের জন্য ভালো হবে, সে রকম নিয়মকানুন হলে তা আমাদের সবার জন্যই ভালো।”
লোটে শেরিং বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি চাকরি করেননি, বিদেশেও চলে যাননি। তার বদলে তিনি ভুটানের মানুষের কথা ভেবেছেন, তাদের নিয়ে কাজ করেছেন। আজ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী।
মিলনায়তনে উপস্থিত হবু চিকিৎসকদের তিনি বলেন, “বেইজলাইন ভালো হলে, অর্থাৎ মানুষ হিসেবে ভালো হলে সার্জারি, মেডিসিন ও শিশুরোগ সকল বিষয়ে আমরা উন্নতি করতে পারব। এ কারণে আমি সবসময় বলি, ভালো সার্জন হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। অবশ্য আমি নিশ্চিত, এখন আমি এই অডিটোরিয়ামে ভালো মানুষদের মধ্যেই রয়েছি।”
কেবল প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং নন, তার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দরজিও এমবিবিএস পাস করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে। মেডিকেলের হোস্টেলে তারা থাকতেন একই কক্ষে। শেরিংয়ের সঙ্গে টান্ডি দরজিও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
“এরপর ভুটানে এক হাসপাতালে কাজ করেছি। সবসময় আমদের দেখা সাক্ষাৎ হত, খেলাধুলা করতাম, চা পানি একসঙ্গে খেতাম। এখন পর্যন্ত…।”
মিলনায়তনজুড়ে সাবেক আর বর্তমান শিক্ষার্থীদের তুমুল করতালিতে হারিয়ে যায় ড. শেরিংয়ের কথা।
ছাত্রজীবনের নানা স্মৃতি স্মরণ করে বার বার আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। সাবেক বন্ধু আর শিক্ষকদের অনেকের নাম ধরে তিনি বিভিন্ন ঘটনার কথা তুলে ধরছিলেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লায়োনপু দিহেন ওয়াংমু, বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার, ময়মনসিংহ বিএমএ-এর সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভুইয়া উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেরিংয়ের আগমন উপলক্ষে মেডিকেল কলেজসহ আশপাশের এলাকা সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। পাশাপাশি শহরজুড়ে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়।