বৃহম্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের আগে তার জানাজায় ছিল মানুষের ঢল।
শোকাহত বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা নিজেই অশ্রুনয়নে নুসরাতের জানাজায় ইমামতি করেন।
পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বুধবার হার মানেন অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত। মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের পর স্বজনরা নুসরাতের লাশ নিয়ে রওনা হন ফেনীর পথে।
বিকাল ৫টায় মরদেহ সোনাগাজীর পল্লীতে পৌঁছলে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে সেখানে; এর মধ্যে রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছিলেন সেখানে।
নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে উপস্থিত অন্যদের চোখও যায় ভিজে।
এরপর সাবের মোহাম্মদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হয় জানাজা। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সমর দাশসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এই জমায়েতে বক্তব্য রাখেন।
এরপর পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় নুসরাতকে।
সোনাগাজীতে যখন নুসরাতকে শেষ বিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচিতে নেমেছিল শিক্ষার্থীসহ নানা সংগঠন; তাদের দাবি ছিল, খুনিদের দৃষ্টান্তমূক শাস্তি দিতে হবে।
দেহের ৮০ শতাংশে আগুনের যন্ত্রণা নিয়ে নুসরাত বলে গিয়েছিলেন, কোনো চাপেই নতি ষ্বীকার করার পাত্রী তিনি নন, অবমাননার বিচারের দাবি তিনি করেই যাবেন।
নুসরাত এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন।
ওই মাদ্রসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে গত মার্চে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার।
সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত শনিবার মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে নুসরাত নিজেই বলে গেছেন।
এরপর নুসরাতের ভাই নোমান হত্যাচেষ্টার আরেকটি মামলা করেন; যাতে ওই মাদ্রাসা অধ্যক্ষকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও আটজনকে।
নুসরাতের এই মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তির অঙ্গীকার করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইতোমধ্যে সোনাগাজী থানার ওসিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে।
কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মতো নুসরাত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।
তবে হাই কোর্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে, নুসরাত হত্যামামলার তদন্তে চোখ রাখবেন তারা। কোনো গাফিলতি দেখলেই হস্তক্ষেপ করবে উচ্চ আদালত।
আরও খবর