মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় চৌগাংগা ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
কয়েক হাজার মানুষ তার জানাজা ও দাফনে অংশ নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেন, ফায়ার সার্ভিসের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপ-পরিচালক দুলাল মিয়া, ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগলে উদ্ধার কাজ চালানোর সময় ল্যাডারে আটকে গুরুতর আহত হন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কুর্মিটোলা স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানে রোববার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ঢাকা থেকে সোহেল রানার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের কেরুয়াইল গ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় আবেগঘন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সোহেল রানার বাবা-মা, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনসহ উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মা হালিমা খাতুন বুক চাপড়ে আর্তনাদ করে বারবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন। সাথে থাকা স্বজনরা কোনোমতেই তাকে শান্ত করতে পারছিল না।
তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, “শেষ বার যাওয়ার আগে পুত আমাকে বারবার বলে গিয়েছিল-‘মা বৈশাখ মাস শুরুর আগেই আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে চলে আসব। জমির ধান কাটতে বাবাকে সহায়তা করব।’
“শুনে আমি বলেছিলাম- বাপ, তোর তিন ভাই বাড়িতে আছে। তোকে ধান কাটতে আসতে হবে কেন।”
তার এক ভাই এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, আরেকজন আগামী বছর এসএসসি দেবে। ধান কাটলে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে বলে রানা ধান কাটতে বাড়ি যাওয়ার কথা বলেছিলেন, তার মা বলছিলেন।
শোকাহত পাড়া প্রতিবেশীরা জানান, বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাকি ছোট তিন ভাইয়ের মধ্যে সোহেল রানা ছিলেন সবার বড়। একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় অভাবের সংসারে তাদের সবার আশা ও ভরসার জায়গা ছিল তাদের প্রিয় বড় ভাই সোহেল। তিন ভাই উজ্জ্বল, রুবেল ও দেলোয়ারকে লেখাপড়ার খরচ তিনি বহন করতেন।।
ছুটি কাটিয়ে গত ২৩ মার্চ কর্মস্থলে ফিরে যান সোহেল রানা। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন পয়লা বৈশাখ বাড়িতে ফিরে সবাইকে নিয়ে বৈশাখি উৎসব করবেন।