নবাবগঞ্জে রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনদের অভিযোগ

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ তিন সন্তানের এক জননীর মৃত্যুর অভিযোগ করছেন স্বজনরা।

আসাদুজ্জামান সুমন কেরানীগঞ্জ-দোহার-নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2019, 04:10 PM
Updated : 6 April 2019, 08:43 PM

উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ‘হলিকেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের এই হাসপাতালে শুক্রবার ওই নারীর অপারেশন হয়।

শনিবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরের সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

স্বজনদের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নাকচ করে তাকে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক বলেছেন, এই রোগীকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তারা। অস্ত্রোপচারের মাঝেই তার অবস্থার অবনতি ঘটে, সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে সোহরাওয়ার্দীর আইসিইউতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তার মৃত্যু ঘটেছে। অস্ত্রোপচারের সময় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কিছু ছিল না।

মৃত কবিতা রানী ফকির (৩৫) নবাবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বালুখণ্ড গ্রামের মৃত হরিচাঁন ফকিরের স্ত্রী।

ছয় মাস আগে কবিতার স্বামী হরিচাঁন ক্যান্সারে মারা যান। তাদের দুই ছেলে আশিস ফকির (১৬) ও নীরব ফকির (১৩) এবং এক মেয়ে পায়েল ফকির (৮)।

কবিতার মা অবলা বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কিছুদিন ধরে তার মেয়ে অসুস্থ থাকায় তারা হলিকেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক যতীন্দ্র সরকারের কাছে পরামর্শের জন্য যান। তখন তিনি ঢাকা থেকে বড় ডাক্তার আসবে বলে জানিয়ে শুক্রবার সকালে হাসপাতালে যেতে বলেন।

অবলার অভিযোগ, যতীন্দ্রের পরামর্শ অনুযায়ী তারা সেখানে গেলে সে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ মাসউদ রেজাকে দেখাতে বলেন। সে অনুযায়ী তাকে দেখালে তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। পরে রিপোর্ট দেখালে তার হার্নিয়া হয়েছে বলা হয়। অপারেশন না করলে যে কোনো সময় ফেটে যেতে পারে বলেও জানান ডাক্তার।

এরপর সেদিনই তারা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন এবং বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে তার মেয়েকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হয় বলে জানান।

অবলা বলেন, সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করেনি তারা। এক পর্যায়ে হাসপাতালের মালিক যতীন্দ্র সরকার ছোটাছুটি শুরু করেন। এরপর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ধ্যার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মেয়েকে ঢাকায় পাঠাতে বলে।

মৃত কবিতার ছোট ভাই সুদেব বিশ্বাস বলেন, “বেহুশ অবস্থায় বোনকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হলে সঙ্গে আমরা দুই ভাইও উঠি। রাতে গিয়ে পৌঁছাই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

“সেখানে নেওয়ার সাথে সাথে আমার বোনকে আইসিইউতে ঢোকানো হয়। শনিবার সকালে আমাদের জানানো হয় আমার বোন আর নেই।”

কবিতার আরেক ভাই বরুন বিশ্বাস বলেন, “আমার বোনকে ওরা এখানেই মেরে ফেলে দায়ভার এড়ানোর জন্য এ নাকট সাজিয়েছে। এতটুকু একটি হার্নিয়ার অপারেশন করতে গিয়ে কি কোনো রোগীর মৃত্যু হয়! আমি এর বিচার চাই।”

এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন কবিতার স্বজনরা।

এ বিষয়ে হাসপাতালে মালিক যতীন্দ্র সরকার বলেন, “রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকার হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোগীর মৃত্যু আমাদের হাসপাতালে হয়নি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পর আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়েছে।”

নবাবগঞ্জ থানার এসআই আবুল হোসেন বলেন, মৃতের পরিবারের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর অপারেশনকারী সার্জন সৈয়দ মাসউদ রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোগী ও তার স্বজনদের সম্মতিতেই আমরা তার অপারেশন করেছি। অপারেশন চলাকালে হঠাৎ করে তার রক্তচাপ কমে যায় ও পালস র‌্যাপিডলি বেড়ে যায়। তার অ্যানাফালাটিক শক হয়েছিল। তখনও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দ্রুত অপারেশন শেষ করে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।

“রোগীর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর রাতে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। 

“জীবন মৃত্যুর মালিক তো আল্লাহ। তাকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। কোনো ডাক্তারই চান না রোগী মারা যাক। আমিও চাইনি।”