মাদ্রাসা অধ্যক্ষের নামে শ্লীলতাহানির মামলা, ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা

ফেনীতে শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অনুসারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2019, 10:43 AM
Updated : 23 Oct 2019, 03:40 PM

গুরুতর দগ্ধ ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, শনিবার সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার এ ঘটনায় পুলিশ মাদ্রাসার এক শিক্ষকসহ দুইজনকে আটক করেছে।

শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় দগ্ধ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রীকে শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে আনা হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা না তোলায় তিনি আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দগ্ধ ওই ছাত্রীর বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামে। তিনি ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী।

মেয়েটির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৭ মার্চ ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে তার বোনের শ্লীলতাহানি করেন। পরে তিনি পরিবারকে জানালে তার মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অধ্যক্ষ এখনও আটক আছেন।

তার অভিযোগ, অধ্যক্ষকে আটকের পর থেকে তার লোকজন মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল।

এর মধ্যে শনিবার সকালে তার বোন ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যান।

ফেনীতে দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে আনার পরও কান্না থামছিল না স্বজনদের। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা না তোলায় এই কিশোরীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে তাদের অভিযোগ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর বোনের বরাতে দিয়ে তার ভাই বলেন, “কেন্দ্রে গিয়ে মেয়েটি খবর পান তার এক বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। তখন তিনি দৌড়ে ছাদে গেলে মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থী তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়।

“তিনি অস্বীকার করলে তারা তার গায়ে কেরোসিন ঠেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তার চিৎকার শুনে পুলিশ ও অন্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।”

তাকে পরিকল্পিতভাবে ছাদে নেওয়া হয়েছে বলে ভাইয়ের অভিযোগ।

 

অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর প্রথমে তাকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসাপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

পরে ফেনী থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান ফেনী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবু তাহের ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, “মেয়েটির শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”

পুলিশ এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে।

পরিদর্শক কামাল বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখনও আটক রয়েছেন।”

গত কয়েক দিন ধরে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অধ্যক্ষের শাস্তি চেয়ে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা এবং তার পাল্টায় অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন একাধিকবার মানববন্ধন করেছে।