রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী বিউটি খাতুন মঙ্গলবার পুলিশ পাহারায় বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেন।
বিউটির পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ভবনীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে। ভগ্নিপতির তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিতে প্রথম দিন বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে তিনি কেন্দ্রে যেতে সাহস পাননি বলে জানান।
বিউটি খাতুনের স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির কারণে পরীক্ষা দেওয়া হলো না বিউটির-এমন একটি সংবাদ প্রকাশ হয় স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যমে।
“সেটি প্রশাসনের নজরে আসার পর সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনজন পুলিশ সদস্য তাদের বাড়ি গিয়ে বিউটিকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বলেন।
“সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে একজন নারীসহ দুই পুলিশ সদস্য বিউটিকে বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। পরীক্ষা শেষে আবার বাড়ি পৌঁছে দেন।”
বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, হুমকির কারণে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি সেটি তারা আগে থানায় জানায়নি। পত্রিকার সংবাদ দেখে পুলিশ পাহারায় তার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
“প্রত্যেক পরীক্ষার দিন পুলিশ গিয়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে এবং বাড়ি পৌঁছে দেবে।”
বিউটি খাতুন উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। তিনি মচমইল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণ করেন। এসএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৪.৯১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
সাত মাস আগে উপজেলার তেলীপুর গ্রামের মন্টু প্রামানিকের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে বিউটি লেখাপড়া করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন।
বিউটি খাতুন বলেন, চার বছর প্রেম করে তারা বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাদের বিয়ে মেনে নেয়নি তার বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। বিয়ের পর থেকে সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করানোর জন্য তার ভগ্নিপতি ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার একডালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন।
“সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে জাহাঙ্গীর তার ছোট ভাই আলমগীর হোসেনের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চান।”
“তাতে স্বাক্ষর না করায় জাহাঙ্গীর ও তার ভাই আলমগীর মিলে সিরাজুলকে পিটিয়ে জখম করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। এতে বাধা দেওয়ায় আমাকেও মারপিট করা হয়।”
পরে সিরাজুলের পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাগমারা থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে সিরাজুল ও বিউটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় বলে বিউটি জানান।
“এরপর থেকে জাহাঙ্গীর বিভিন্নভাবে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ভবানীগঞ্জ পরীক্ষা দিতে গেলে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন জাহাঙ্গীর। এ কারণে ভয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারিনি।”
বিউটির স্বামী রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র সিরাজুল বলেন, “পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসলেও পরে বাগমারা থানা মামলা নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বিউটি সোমবার আদালতে মামলা দায়ের করেন।
“বিউটি বাদী হয়ে তার বড় বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর, বড় বোন বিলকিস ও জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীরসহ পাঁচজনের নামে মামলাটি দায়ের করেন।”
মামলা না নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, “ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বিষয়টি মীমাংসা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে কারণে মামলা নেওয়া হয়নি। তবে তারা আদালতে মামলা করেছেন শুনেছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জাহাঙ্গীর আলম ভবনীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডলের স্ত্রীর বোনের ছেলে।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডলকে পাওয়া যায়নি। তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।