ট্রলার ডুবি: ‘পাশ দিয়ে অনেকে গেলেও উদ্ধার করেনি’

নারায়ণগঞ্জে ভোটের দায়িত্ব শেষে ফেরার পথে ট্রলার ডুবির সময় পাশ দিয়ে অনেক নৌযান গেলেও তারা উদ্ধার করতে আসেনি বলে আক্ষেপ করেছেন চালক শাহ্ পরান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2019, 08:01 AM
Updated : 2 April 2019, 08:07 AM

রোববার জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপালন শেষে ব্যালট বাক্স নিয়ে ফেরার পথে ট্রলার ডুবে এক নারী আনসার সদস্যের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এখনও দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন।

ওই ট্রলারের চালক শাহ্ পরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কয়েকটা বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। ঘাট থেকে ট্রলার ছেড়ে মেঘনার মাঝ নদীতে গেলে হঠাৎ করেই কালো মেঘে পুরো আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল। প্রচণ্ড বাতাস ও বড় বড় ঢেউয়ের আঘাতে মুহূর্তের মধ্যেই ট্রলারটি ঘুরে গেলে পানি উঠে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।

“ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় অনেকেই ছাদে আশ্রয় নেয়। আমরা কেউ কেউ ব্যালট বাক্স আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করি। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক নৌকা-ট্রলার গেলেও উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। তারা এগিয়ে এলে বা বয়া ফেললে সবাই নিরাপদে বাঁচতে পারতেন।”

ঘণ্টা খানেক পরে একটা লবণবাহী শাম্পান এসে তাদের উদ্ধার করে বলে তিনি জানান।

ততক্ষণে নিখোঁজ হন আনসার সদস্য রিতা আক্তার (৩৫), চরহোগলা ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক সোনারগাঁ মেঘনাঘাট শাখার ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিন ও পুলিশের শহর উপপরিদর্শক (টিএসআই) মো. সেলিম।

সোমবার সকালে রিতার লাশ তারা উদ্ধার করা হয়। এখনও বোরহান ও সেলিমের খোঁজ মেলেনি। তাদের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশ ও নৌবাহিনীর ১০ সদস্যের ডুবুরি দল।

সেই থেকে নিখোঁজদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে মেঘনা তীরের পরিবেশ।

নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের ছোট ভাই ফরহাদ উদ্দিন বলেন, “আপনারা আমার ভাইকে এনে দেন। আমরা আমার ভাইকে ফেরত চাই।”

টিএসআই সেলিমের খালাত ভাই রিংকু জানান, তিনি তার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছেন না। উদ্ধারের গতি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

ওই সময় প্রায় একসঙ্গে দুটি ট্রলারে করে ফিরছিলেন ভোট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। একটি ট্রলার ডুবে গেলেও অন্য ট্রলারটিও ঝুঁকিতে পড়েছিল। সেই ট্রলারে ছিলেন চরকিশোরগঞ্জ ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইউসিবি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস ও ঢেউয়ে আমাদের ট্রলারের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। একপযার্য়ে ঢেউয়ের আঘাতে আমাদের ট্রলারের তলা ফেটে যায়। আমরা ট্রলারের পানি সেচে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। প্রচুর পানি উঠতে থাকে। ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পানি উঠে ট্রলার ভারী হয়ে যায়।

“অন্ধকারে আমরা নদীর কূল দেখতে পাচ্ছিলাম না। বিদ্যুৎ চমকালে উসমানির চরে কাছাকাছি চলে যায় আমাদের ট্রলারটা। আমরা নদীতে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে প্রাণ বাঁচাই। আশপাশের বাড়িতে গিয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা নেই। পরে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) খবর পেয়ে গাড়ি পাঠান।”

সাখাওয়াত বলেন, “মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকে আমরা ফেরত এসেছি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে প্রাণে বেঁচে এসেছি। নদীর তীর দেখতে না পেলে আমাদের ট্রলারও পুরো ডুবে যেত। যেভাবে সমুদ্রের মত বড় বড় ঢেউ ও বাতাস হচ্ছিল, প্রাণে বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।”

নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম নাহিদ হাসান।

তিনি জানান, নিখোঁজদের খোঁজে নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। স্ক্যানার দিয়ে ডুবে যাওয়ার ট্রলার শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া অভিযান চলবে।

সোমবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের দেখতে যান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহম্মেদ।

তিনি বলেন, ট্রলার ডুবিতে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ও আহত প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।

তিনি সবার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সহানুভূতি জানান।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ মণ্ডল বলেন, নিখোঁজ দুজনের খোঁজে নদীতে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।