নির্যাতনের শিকার সেতু আক্তার (১০) রাজৈরের কবিরাজপুর ইউনিয়নের পান্থাপাড়া গ্রামের রিয়াজ শিকদারের মেয়ে ও কালামৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা রিয়াজ শিকদার ঢাকায় ভাঙ্গারির ব্যবসা করেন।
আটকরা হলেন সেতুর সৎ মা সাবিনা বেগম (৪০) ও ১৪ বছর বয়সী সৎ ভাই।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, প্রায় নয় বছর আগে সেতুর মা রেহানা বেগম মারা যান। মা জীবিত থাকতেই তার বাবা সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন। সাবিনা অনেকবার সেতুকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। গত এক বছর ধরে সেতুর উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।
সেতু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “সৎ নানির প্ররোচনায় সৎ মা কারণে-অকারণে গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানের ছ্যাঁকা দিত। যন্ত্রনায় চিৎকার করলে আরও বেশি কষ্ট দিত।
“বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। বাবাকেও বলিনি।”
সম্প্রতি নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী মমতা খাতুন।
মমতা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি লোকজনের মুখে সেতুর কথা শুনে ওদের বাড়ি গিয়ে ওর সৎ মাকে বোঝানোর চেষ্টা করি’ কিন্তু তিনি অবুঝের মতো। পরে আমি শিশুর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করি ও পুলিশকে বিষয়টি খুলে বলি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মন্ডল বলেন, শিশুটির শরীরের পাঁচটি স্থানে গরম লোহা দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার ঘার, হাত ও পায়ে ক্ষত রয়েছে।
“আমরা শিশুটির যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। আশা করছি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।”
রাজৈর থানার এসআই খান মো. জোবায়ের বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ২৪ মার্চ। ওইদিন রাতে শিশুটির সৎ মা ও তার সৎ নানি কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়; কিন্তু আমরা তখন এ ঘটনার খবর পাইনি। আমরা গতকাল (শনিবার) রাতে ওই শিশুটির নির্যাতনের খবর পাই।
“পরে রোববার সকালে শিশুটিকে বাড়ি থেকে উদ্ধার এবং তার সৎ মা ও তার সৎ ভাইকে আটক করি। তবে তার সৎ নানিকে পাওয়া যায়নি, তিনি পলাতক রয়েছেন।”
এই বিষয়ে রাজৈর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোমেনা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে এসআই জোবায়ের জানান।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহানা নাসরিন বলেন, “মেয়েটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সে যদি চায় তবে আমরা তার পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”