কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন

বাস চাপায় নিহত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গোরি মোহাম্মদ ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

রাসেল চৌধুরী হবিগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2019, 05:25 PM
Updated : 24 March 2019, 05:25 PM

রোববার বাদ জোহর জানাজা শেষে নিজ গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শনিবার রাতে তার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

শনিবার বিকালে সিলেট-ময়মনসিংহ রোডে শেরপুরে বাস ভাড়া নিয়ে হেলপারের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গোরি মোহাম্মদ ওয়াসিমকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পথে তার মৃত্যু হয়।

একমাত্র ছেলে ওয়াসিমকে হারিয়ে তাদের পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম। ওয়াসিমের বাবা-মায়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ।

গোরি মোহাম্মদ ওয়াসিম

ওয়াসিমের মা পারভিন আক্তার ও বাবা আবু জায়েদ মাহবুব বার বার ওয়াসিমের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে জ্ঞান হারাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর পর এরকম দৃশ্য দেখে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ছেন পাড়া-প্রতিবেশীরাও।

স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুর রহমান বলেন, ওয়াসিমের মৃত্যুতে তারা সবাই শোকাহত। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।

ওয়াসিমের বাবা আবু জায়েদ মাহবুব বলেন, “আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।”

তিনি পুত্র হত্যার জন্য দায়ী বাস চালক ও হেলপারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।

ওয়াসিমের মা পারভিন আক্তার তার সন্তান হত্যার জন্য দায়ীদের ফাঁসি দাবি করেন।

নবীগঞ্জ থানার ওসি ইকবাল হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ওয়াসিমের বাড়িতে ছুটে যান। এ ঘটনায় পুরো উপজেলার মানুষ মর্মাহত হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী বলেন, “সড়কে এরকম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় আমি মর্মাহত ও শোকাহত। নিহতের পরিবারকে শান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার নেই।”

এদিকে, রোববার দুপুরে বাসের চালক হেলপারদের বিচারের দাবিতে মহাসড়কের দেবপাড়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে উদার পরিবহনের রোড পারমিট বাতিলসহ চালক-হেলপারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন।

ওয়াসিমসহ ১১ জন শিক্ষার্থী হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের দেবপাড়ায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। শনিবার বিকালে ফেরার পথে তারা ময়মনসিংহ-সিলেট রোডের উদার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসের ভাড়া ও সিটে বসা নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে তাদের বিবাদ হয়।

এক পর্যায়ে বাসের হেলপার ওয়াসিমসহ আরেকজনকে ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

ওয়াসিমের সঙ্গে থাকা রাকিব হোসেন বলেন, ওয়াসিম বাস থেকে পড়ে গেলে বাস চালক বেপরোয়া গতিতে তার ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেয়।

এ সময় রাকিব হোসেন বাস থেকে লাফ দিয়ে নামেন বলে জানান।

একটি প্রাইভেটকারে করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

রাকিব হোসেনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বাসটি আটক করেন। ততক্ষণে বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। পরে মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশ বাসটি জব্দ করে।

এ ঘটনায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদার পরিবহনের বাসচালক জুয়েল আহমদ ও রাত ২টার দিকে হেলপার মাসুক আলীকে পৃথক স্থান থেকে আটক করে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ।