রাঙামাটির ২ হত্যাকাণ্ড: মামলা হয়নি, গ্রেপ্তার নেই

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সাত নির্বাচনকর্মীকে হত্যা ও বিলাইছড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়নি। এ দুটি ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি।

রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2019, 02:27 PM
Updated : 20 March 2019, 02:27 PM

বাঘাইছড়ি থানার ওসি মঞ্জুর আলম এবং বিলাইছড়ি থানার ওসি পারভেজ আলী বলেছেন, মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। বুধবারই মামলা হতে পারে।

এদিকে, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তাদের দাফন ও দাহ সম্পন্ন হয়েছে বলে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

সোমবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে বাঘাইছড়ি উপজেলায় বাঘাইছড়ি-দিঘিনালা সড়কের নয় মাইল এলাকায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীর ব্রাশ ফায়ারে সাতজন নিহত ও অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

এর একদিন পর বিলাইছড়ির আলিখিয়ং এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে একদল বন্দুকধারী।

এই দুই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ

বুধবার সকালে রাঙামাটি পৌরসভা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদারের সভাপতিত্বে দলের জেলা সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা, চিং কিউ রোয়াজা ও অংসু প্রু চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ের এসব হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর জন্য জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফকে দায়ী করেন।

তারা পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারীদের নির্মূলে অভিযান চালানোর দাবি জানান।

সমাবেশে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, মানুষ হত্যা করে, জীবন কেড়ে নিয়ে আর যাই হোক চুক্তি বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন বা অগ্রগতি সম্ভব নয়। বরং চুক্তির বাকি ধারাগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে এসব হত্যা খুন মাস্তানি বন্ধ করতে হবে, তবেই চুক্তির অগ্রগতি সুন্দরভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

জনসংহতি সমিতির (সন্তু লারমা) বিবৃতি

এদিকে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী দায়িত্বপালনকারী সাতজনকে হত্যা ও বিলাইছড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে গুলি করে হত্যার জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করায় সংগঠনটি প্রতিবাদ করেছে।

বুধবার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এই দুটি ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্তরা অস্বীকার করে বলেছে, একটি মহল জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মনগড়া, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রতিহিংসামূলকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে জড়িত করছে।

এতে সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের বিনয় কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় ব্রাশ ফায়ার করে নিরীহ নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হত্যা ও অনেককে আহত করা এবং ১৯ মার্চ বিলাইছড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যাকে কে বা কারা গুলি করে হত্যার তদন্ত হওয়ার আগেই এই ঘটনায় মনগড়া ও কাল্পনিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান যুক্তি ও বাস্তবসম্মত নয়।

এ ধরনের বক্তব্য প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে সুষ্ঠু তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাধাদানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কোনোভাবে উক্ত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়।

জনসংহতি সমিতি ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানায়। হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনাও প্রকাশ এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছে।

পিসিজেএসএসের পাশাপাশি ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকেও (ইউপিডিএফ) বাঘাইছড়ির হত্যাকাণ্ডের জন্য কেউ কেউ দায়ী করেছে।

ইউপিডেএফের বিবৃতি

বাঘাইছড়ির ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমার স্বাক্ষরে পাঠানো এক বিবৃতিতে এর নিন্দা  ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ঘটনাস্থল ইউপিডিএফ সমর্থক অধ্যুষিত হওয়ায় কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম ও এক শ্রেণির গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক দলটিকে সন্দেহের তালিকায় যুক্ত করেছে।

ইউপিডিএফ এটি অবিবেচনাপ্রসূত দাবি করে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।  

বাঘাইছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং ইউপিডিএফের কোনো প্রার্থীও ছিল না। তাই ইউপিডিএফ নির্বাচনী টিমের ওপর হামলা করে নিজেদের অহেতুক বিতর্কে জড়ানোর কোনো যুক্তি নেই বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

হামলার মোটিভ ও যৌক্তিকতা বিচার না করে কেবলমাত্র হীন উদ্দেশ্যে ইউপিডিএফ-এর ওপর দায় না চাপানো, প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাধারণ জনগণকে হয়রানি না করার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।