মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ‘নাগরিক সমাজের’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2019, 02:36 PM
Updated : 19 March 2019, 03:01 PM

মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

এছাড়া উপস্থিত জনতার সামনে স্মারকলিপি পাঠ করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৗস জুয়েল।

স্মারকলিপির শুরুতে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বঙ্গবন্ধুর সহচর ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত (মরণোত্তর) এ কে এম সামসুজ্জোহা ও ওসমান পরিবারের প্রশংসার উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।  

এরপরই স্মারকলিপিতে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুরু করা হয়।

হাসান ফেরদৗস বলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, নারায়ণগঞ্জে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেই একটি জনবিচ্ছিন্ন শ্রেণি এই পরিবারটিকে টার্গেট করে মাঠে নামে এবং বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করা শুরু করে।

“সংবিধানের বাহক সেজে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের সাথে আঁতাত করা ক্ষমতার জন্য লালায়িত কিছু বড় বড় ডক্টর সাহেবদের প্রেসক্রিপশনে ঘন ঘন রাজধানী থেকে তথাকিথত কিছু সুশীল নারায়ণগঞ্জে আসছেন। তারা একই সাথে আপনার ও বর্তমান সরকারের কুৎসা রটনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার ও নারায়ণগঞ্জের ভাবমূর্তি ক্ষূণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন।”

এদের পেছনে সিটি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী রয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় স্মারকলিপিতে।

স্মারকলিপিতে মেয়র আইভীর গত ৬ই মার্চের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়।

ওই বক্তব্যে আইভী জনসমক্ষে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে নারায়ণগঞ্জে আজ পর্যন্ত যত খুন হয়েছে তার সবই ওসমান পরিবারের দ্বারা হয়েছে বলে আইভী অভিযোগ করেন, বলেন হাসান ফেরদৗস।

“আমরা স্তম্ভিত হলাম। মেয়র আইভী আরও বলেছেন- ‘সাগর-রুনীর ব্যাপারে আমরা অনেক কিছুই জানি, অনেক কিছু জড়িত, তনু হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না, সেটাও জানি কারা জড়িত।’”

মেয়র আইভীর উপস্থিতিতে ‘ভাড়া করে আনা সুশীল ও তার সাথে থাকা জনবিচ্ছিন্ন গুটি কয়েক লোক’ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মিথ্যাচার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে বলেও স্মারকলিপিতে বলা হয়। 

এতে নারায়ণগঞ্জবাসী বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, “নারায়ণগঞ্জের সর্বমহলে একটিই প্রশ্ন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও দলীয় মেয়র হয়ে আইভীর এমন বক্তব্য ও সুশীলদের প্রতি তার এতটা নগ্ন সমর্থন কেন?”

এর কারণ হিসেবে স্মারকলিপিতে আইভীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধী আলবদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর, কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরার সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন গত বছরের ২০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে একটি জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

এই জবানবন্দির বিবরণ ওই সময় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায় বলে হাসান বলেন।

হাসান বলেন, বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে বর্তমান সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত মেয়র আইভীকে জামায়াত সমর্থন দিয়েছে। এর মূল কারণ পারিবারিকভাবে জামায়াতে ইসলামের সাথে মেয়র আইভীর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আইভীর সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে মঈনুদ্দিন জবানবন্দিতে বলেছেন বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।

যে সময় পুরো দেশ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল, সেসময় মেয়র আইভী যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের পরিবারকে ‘অতি গোপনে’ জন্মনিবন্ধন করে দিয়েছেন, বলেন হাসান।

হাসান ফেরদৌস জামায়াত নেতা মঈনুদ্দিনের বরাত দিয়ে বলেন, মুজাহিদের স্ত্রী আইভীর ক্লাসমেট ছিলেন এবং মুজাহিদ যখন জেলে তখন তার ছেলেদের জন্মনিবন্ধনও এখানেই হয়েছে। অনেক ঘুরাঘুরি করে যখন পাচ্ছিল না, তখন মুজাহিদের ওয়াইফ আইভীকে বলার পরই আধঘণ্টার মধ্যে এই জন্মনিবন্ধন হয়ে গেল।

এসব ঘটনা ও আইভীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জে আবারও অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং ২০০১ এর ১৬ই জুনের বোমা হামলার মতো কোনো ঘটনার পরিকল্পনা হচ্ছে কিনা শঙ্কা প্রকাশ করা হয় স্মারকলিপিতে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে নারায়ণগঞ্জের প্রায় ২১ শ্রেণির পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, বর্তমান ডেপুটি কমান্ডার নুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া, জেলা পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মুনসুর আহমেদ, বাংলাদেশ পাট আড়ৎদার সমিতির সভাপতি ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলু, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা প্রমুখ।

জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া স্মারকলিপির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও সচিবকেও দেওয়া হয়। এছাড়া মেয়র আইভীর দেওয়া বক্তব্যের অডিও-ভিডিও সম্বলিত পেন ড্রাইভ (লিখিত ভাষ্যসহ)  সরবরাহ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, স্মারকলিপি গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ নিয়ম অনুসারে স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।