সুলতান স্বর্ণপদক পেলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার

খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারকে সুলতান স্বর্ণপদক-২০১৯ দেওয়া হয়েছে।

নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2019, 05:46 PM
Updated : 12 March 2019, 05:46 PM

মঙ্গলবার নড়াইলে ১০ দিনব্যাপী সুলতান মেলার শেষদিন তাকে এ পদক দেওয়া হয়।

নড়াইল শহরের নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ শিল্পীর গলায় পদক পরিয়ে দেন।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু প্রমুখ।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০০১ সাল থেকে ‘সুলতান পদক’ দিচ্ছে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন। প্রতিবছর দেশবরেণ্য একজন চিত্রশিল্পীকে এ পদক দেওয়া হয়। প্রথমে চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী সুলতান পদক লাভ করেন।

এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু বলেন, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ৩ মার্চ বিকালে সুলতান মঞ্চ চত্বরে ১০ দিনব্যাপী সুলতান মেলার উদ্বোধন করা হয়।

মেলায় কুস্তি, ষাঁড়ের লড়াই, দড়ি টানাটানি, ভলিবল প্রতিযোগিতা, আর্চারি, কাবাডি, লাঠিখেলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্রপ্রদর্শনী, আবৃত্তি, নাটক, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া মেলায় বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনাও হয়।

এবার ছিল বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মজয়ন্তী।

এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ অগাস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।

কবি গোলাম মোস্তফার ছেলে মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার মাগুরা মহকুমায় (বর্তমান জেলা) শ্রীপুর থানার নাকোল গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে মা জমিলা খাতুন মারা যান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।

নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বিজ্ঞানে ভর্তি হন। সেখানে তিনি পড়াশোনা না করে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯৬৫ সালে মেরী মনোয়ারের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে সাদাত মনোয়ার এবং এক মেয়ে নন্দিনী মনোয়ার।

কর্মজীবন শুরু করেন পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

এছাড়া জনবিভাগ উন্নয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

২০০৪ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক, ১৯৯০ সালে টিভি নাটকের জন্য টেনাশিনাস পদক লাভ, ১৯৯২ সালে চারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে শিশু শিল্পকলা কেন্দ্র কিডস কালচারাল ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম কর্তৃক কিডস সম্মাননা পদক, ২০০২ সালে চিত্রশিল্প, নাট্য নির্দেশক এবং পাপেট নির্মাণে অবদানের জন্য শিশুকেন্দ্র থেকে বিশেষ সম্মাননা লাভসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।