তবে রাজশাহী পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
‘মমতা নার্সিং ইন্সটিটিউটের’ দুই প্রতিষ্ঠাতা মনিরুজ্জামান ও শবনম মোস্তারী মমি এ অভিযোগ করেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তাদের দুইজনের নামে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স, নিবন্ধন ও বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল থেকে অনুমোদন নেওয়া হয় বলে শবনম জানান।
“তবে আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর আগ্রহের কারণে তাকে দুই বছর মেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক সভাপতি করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তার সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়েছে।”
শবনম বলেন, বহরমপুরে দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হওয়ার পর স্থান স্বল্পতার কারণে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করা হয় নগরের বালিয়া পুকুর দেবীসিং পাড়ায়। অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর জার্মিনেট প্লাজার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে সেখানে শিক্ষা কার্যাক্রম চালু করা হয়।
চার লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে মাসিক ১০ হাজার টাকায় ভাড়ায় খোলা ছাদের অবকাঠামো সম্পন্ন করার শর্তে ভাড়া নেন বলে শবনম জানান।
শবনম অভিযোগ করেন, দেবীসিং পাড়ায় জার্মিনেট প্লাজার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরুর পর ভবনের মালিক আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাবি করেন।
“এরপর তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের দুই মালিকের দ্বন্দ্ব শুরু হলে এক পর্যায়ে ভবনের কেয়ারটেকারকে দিয়ে রহিম প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ করে দেন।
“একই সঙ্গে তিনি তার নিজের নামে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির প্রচারপত্র বিলি করেন এবং বিলবোর্ডেও তার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেন।”
“পরবর্তীতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে উক্ত অর্থ তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার কথা হলেও তিনি জমা দেননি।”
শবনমের অভিযোগ, ওই সমঝোতা বৈঠকে প্রতিষ্ঠানের তার নিজের (শবনম) ৩৫ ভাগ, মুনিরুজ্জামানের ৩৩ ভাগ এবং আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীসহ আরও দুইজন অর্থদাতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও উম্মে মারুফা ইয়াসমিন মুনের ৩২ ভাগ শেয়ার বন্টন করা হয়। তবে সে সিদ্ধান্তও মানেননি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী।
শবনম বলেন, এর জের ধরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। সেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য ফ্রন্টের আহবায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা।
শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, “বিষয়টি সমাধানের জন্য বসা হয়েছিল। আমি নিজে এসপি আব্দুর রহিমকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি; কিন্তু তিনি কেন বুঝতে চাইছেন না সেটা ভাবার বিষয়। তিনি অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শবনম মোস্তারী মমিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন ভবনের কেয়ারটেকার সোহেল রানা।
এর আগে ভবনের মালিক আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীকে ভয়ভীতি দেখানো ও আইজিপিকে বলার হুমকির অভিযোগ তুলে গত ৮ ডিসেম্বর সোহেল রানা বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও করেন বলেও মনিরুজ্জামান জানান।
এদিকে, প্রতিষ্ঠানের অর্থ নেওয়া ও দখলের বিষয় কথা অস্বীকার করে আব্দুল রহিম শাহ চৌধুরী বলেন, “আমি ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে শিক্ষার্থীদের সার্থে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য আমার বিরুদ্ধ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করা হয়েছে।”
তবে প্রতিষ্ঠানের মালিক কে জানতে চাইলে তাদের নাম বলতে অস্বীকার করেন তিনি।
রহিম চৌধুরী অর্থ নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি কপি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসেছে, যেখানে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ছয় টাকা সভাপতি রহিম চৌধুরী গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ আছে। গ্রহণকারি হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর এবং প্রদানকারীর স্বাক্ষর রয়েছে অধ্যক্ষ হিমালয় রায়ের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য চাকরি থাকা অবস্থায় কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে জড়িত থাকতে পারবে না। এটি চাকরি বিধির পরিপন্থি।