রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দাবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকরিতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারের দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় বিক্ষোভ ও অবরোধ করেছে স্থানীয়রা।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2019, 05:05 PM
Updated : 4 March 2019, 05:05 PM

সোমবার উখিয়ার কোটবাজার স্টেশনে 'উখিয়া অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি'র এ বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুইটি গাড়ি ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ সময় শহীদ এ টি এম জাফর আলম আরাকান সড়কের (কক্সবাজার-টেকনাফ ) উভয় পাশে হাজারো যানবাহন আটকা পড়ে।

পরে প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

বিক্ষোভকারীরা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও এনজিওগুলোকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত কর্মীদের নানা অজুহাতে স্থানীয়দের প্রতিনিয়ত চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের বঞ্চিত করা হচ্ছে। নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কক্সবাজারের বাইরের লোকজনকে।

উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর চাকরিতে ছাঁটাই বন্ধ এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর খবরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

“এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।”

পরে উখিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফখরুল ইসলাম ও উখিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তায়হানসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে পরিদর্শক নুরুল ইসলাম জানান।

এ সময় সহকারী কমিশনার ফখরুল ইসলাম বিক্ষোভকারীদের দাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন বলেও জানান তিনি।

এরপর অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক ইমরুল কায়েস চৌধুরী সমাবেশস্থলে এসে স্থানীয়দের দাবির ন্যায্যতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

তিনি আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে অনেকে ভিটে মাটি হারিয়ে বাস্তুহারায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের কারণে নানাভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন স্থানীয়রা।”

ইমরুল আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয়রা। অথচ ক্যাম্পের বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলোর চাকরিতে স্থানীয়দের ছাঁটাই অব্যাহত রেখে কক্সবাজারের বাইরের লোকজনকেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটি স্থানীয়দের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিমাতাসূলভ আচরণ।

তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থাগুলোতে স্থানীয়দের চাকরিচ্যুতি বন্ধ করার পাশিপাশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এটি জীবন-জীবিকা, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের ন্যায্য দাবি।

অন্যথায় দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুমকি দেন ইমরুল।

উখিয়া অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক শরীফ আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

আন্দোলনকারী স্থানীয়দের দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফখরুল ইসলাম বলেন, এনজিও সংস্থাগুলোতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের চাকরিচ্যুতির পাশাপাশি অগ্রাধিকার না দেওয়ার অভিযোগটি প্রশাসনও নানা মাধ্যমে অবহিত হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।