এলাকাবাসীর কাছে এমপি মাশরাফি 

নড়াইল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা একদিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কাটিয়েছেন।

মাহবুবুর রশিদ, নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2019, 05:35 PM
Updated : 28 Feb 2019, 05:35 PM

বৃহস্পতিবার তিনি এলাকার মানুষের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন।

মাশরাফি নড়াইল জেলাকে মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।   

গত মঙ্গলবার রাতে তিনি নড়াইলে আসেন বলে জানান তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৌমেন চন্দ্র বসু।

সৌমেন বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মাশরাফি লোহাগড়া উপজেলায় যাওয়ার পথে প্রথমে মুলদাইড় হাওয়াইখালী খালের পুনঃখনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

“খালটি পুনঃখনন করা হলেও খালের উপর নির্মিত স্লুইচগেট উঁচু হওয়ায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে বলে স্থানীয়রা মাশরাফিকে জানান। বিষয়টি সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মাশরাফি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন।”

সৌমেন বলেন, এরপর মুলদাইড়-চালিতাতলা পর্যন্ত সড়কটি পাকাকরণের কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় এ কাজের নানা অনিয়মের কথা এলাকাবাসী জানালে মাশরাফি সেখানে উপস্থিত এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এলাকার যেকোনো সমস্যার কথা মাশরাফিকে জানানোর অনুরোধ করেন স্থানীয়দের, বলেন সৌমেন।

এরপর মাশরাফির বহর লোহাগড়ার দিকে যাওয়ার সময় এড়েন্দা স্ট্যান্ডে কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানসহ কয়েকশত মানুষ এমপিকে শুভেচ্ছা জানান। পরে মাশরাফির বহর লোহাগড়ার পাঁচুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছায়।

এ সময় ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা প্রিয় তারকার সঙ্গে সময় কাটায়, ছবি তোলে।

মাশরাফি এই বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এরপর তার বহর যায় কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাঘা গ্রামে। সেখানে নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গন কবলিত দুটি পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। এ সময় ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা শোনেন এবং তাদের দাবির প্রেক্ষিতে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রকল্প তৈরি করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন।

জয়পুর ইউনিয়নের বেলটিয়া নদীর ভাঙ্গন এলাকাও পরিদর্শন করেন মাশরাফি। এ সময় স্থানীয় একটি খাল পুনঃখনন ও একটি স্লুইসগেট নির্মাণ নিয়ে জনগণের অভিযোগ ও কিছু সুপারিশমালা ধৈর্য সহকারে শোনেন। জনগণের কল্যাণে যা যা করণীয় সেভাবেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর আশ্বাস দেন।  

পরে তিনি লোহাগড়া উপজেলা শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল উদ্বোধন করেন।

বিকালে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়নে লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

এরপর মাশরাফি লোহাগড়া পৌরসভার ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানসহ নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিতে লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম ও পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

কোটাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা মাশরাফি বিন মর্তুজাকে এতকাল ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে চিনতান। সম্প্রতি এমপি হিসেবে চিনেছি। আজ থেকে তার কর্মকাণ্ড দেখে নতুন করে ‘ফাটাকেষ্ট’ নাম দিলাম।

“ভারতের ফাটাকেষ্ট সিনেমার স্টাইলেই আমাদের এমপি সাহেব কাজ শুরু করেছেন। আমরা আশাবাদী দীর্ঘদিন পরে হলেও এবার নড়াইল জেলার উন্নয়ন হবে।”

এ সময় মাশরাফির সঙ্গে নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, “সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার মাধ্যমে নড়াইল জেলার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে বলে আমরা মনে করি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।”

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “মাশরাফি বিন মর্তুজার হাত ধরেই নড়াইল উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় এগিয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।”

এই তারকা ক্রিকেটারের নেতৃত্ব উন্নয়নের পাশাপাশি মাদকমুক্ত নড়াইল গড়তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।