ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জনের মৃত্যু: ঘটনাস্থলে তদন্ত দল

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর তদন্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিশাকিল আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2019, 02:06 PM
Updated : 3 March 2019, 04:53 PM

এছাড়া, নিহতদের বাড়ি থেকে আশপাশের এক কিলোমিটারে জনসাধারণের চলাচলে জারি করা নিষেধাজ্ঞা উপজেলা প্রশাসন তুলে নিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া বিদ্যালয় দুটিও বৃহস্পতিবার থেকে যথারীতি চলবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন শাহজাহান নেওয়াজ জানান, বুধবার ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মরিচপাড়া গ্রামে মৃত আবু তাহেরের বাড়ি এসেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান এফইটিপিবি ফেলো (আইইডিসিআর) ডা. গাজী শাহ্ আলমের নেতৃত্বে তদন্ত করছেন আইইডিসিআর-এর মেডিকেল অফিসার ডা. তানজীলা নওরীন, এফইটিপিবি ফেলো (আইইডিসিআর) ডা. দেবাশীষ কুমার শাহা, আইইডিসিআর-এর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহানাজ পারভীন ও আইইডিসিআর-এর মিউজিয়াম অ্যাটেনডেন্ট ইসমাইল খান।

গত সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষে তিনদিনের মধ্যে আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত দলকে বলা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন শাহজাহান নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা মৃত আবু তাহেরের বাড়ির চারটি কক্ষ ও বাড়ির আশপাশ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করছেন। এছাড়া আশপাশের মানুষজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

“সংগৃহীত নমুনা ঢাকায় পাঠাবেন। ঢাকায় অজ্ঞাত রোগটি শনাক্ত করা না গেলে পরে বিদেশে পাঠানো হবে শনাক্তের জন্য।”

তিনি জানান, রাজশাহী থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে আসবে। তারাও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করবেন তদন্তের জন্য।

রোগ নির্ণয়ে কিছুদিন সময় লাগবে জানিয়ে ডা. শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, “রোগ নির্ণয় করা গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”

গ্রামে ভাইরাসের কোনো ভয় নেই; মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন বলেও সিভিল সার্জন শাহজাহান নেওয়াজ জানান।

এ সময় ঠাকুরগাঁওয়ের চিকিৎসক তোজ্জাম্মেল হক, ফিরোজ জামান জুয়েলসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগ নির্ণয় না হওয়ায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমর চ্যাটার্জী।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মরিচপাড়া গ্রামের আবু তাহের (৫৫), তার জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫), স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫), দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসানের (২৭) মৃত্যু হয়।

এছাড় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মৃত ইউসুফ আলীর স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৩২), তাদের শিশু সন্তান (২) এবং কোহিনুরের বাবা রবিউল ইসলাম (৪৪)।

ঢাকা থেকে আসা আইইডিসিআর-এর একটি বিশেষজ্ঞ দল মঙ্গলবার থেকে ঘটনাস্থলে আছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে একটি মেডিকেল টিম বসানোর পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে নিহতদের বাড়ি থেকে আশপাশের এক কিলোমিটারে জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া এলাকায় ২০০ বিশেষ মুখোশও বিতরণ করা হয়।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন,  গ্রামে ভাইরাসের কোনো ভয় নেই; মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন বলেও সিভিল সার্জনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া বিদ্যালয় দুটিও বৃহস্পতিবার থেকে চলবে।