খাল দখলে আ. লীগ নেতার ছেলে, প্রশাসন দেখেশুনে চুপ

ময়মনসিংহে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে খাল দখল করে ভরাটের কাজ চালিয়ে গেলেও প্রশাসন দেখেশুনে চুপ রয়েছে।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 07:04 AM
Updated : 25 Feb 2019, 09:18 AM

ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন, ছেলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আর প্রশাসন বলছে, তারা ব্যবস্থা নেবেন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার সাহেবখালি খালের এক জায়গায় ট্রাক ভরে মাটি এনে ফেলছেন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সরোয়ার মোড়লের ছেলে মোশারফ হোসেন।

ভরাট কাজ শুরু করলে কয়েক দিন আগে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। কিন্তু ভরাট থামেনি।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন বলেন, “এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মোশারফকে খালে মাটি ফেলা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু মোশারফ হোসেন নির্দেশ মানেননি।

মোশারফ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার নিজের মালিকানার জমিতেই মাটি ফেলা হচ্ছে। খালও আমার জমিতে পড়েছে।”

তবে এ দাবির বিষয়ে কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হেকিম মণ্ডল বলেন, “৫০-৬০ বছর ধরে দেখছি এই খাল দিয়ে এ এলাকার আট-দশটি গ্রাম ও বিলের পানি নেমে ব্রহ্মপুত্র নদে চলে যায়।”

খালটি ভরাট হলে চরঈশ্বরদিয়ার মাগুরিয়া বিল, চর আনন্দীপুর, চরলক্ষ্মীপুর, চরহরিপুর, চরগোবিন্দপুর, চরখরিচাসহ বিভিন্ন এলাকার  প্রায় তিন হাজার একর জমির ফসল হুমকিতে পড়বে বলে জানিয়েছেন চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ (৫০)।

তিনি বলেন, “পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী খাল ভরাট বন্ধের দাবি জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তার পরও বন্ধ হচ্ছে না খাল ভরাটের কাজ।”

এ বিষয়ে মোশারফের বাবা কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সরোয়ার মোড়ল বলে, “মোশাররফ আমার পাঁচ ছেলের মধ্যে একজন। বিতর্কিত লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করে। এজন্য তার সঙ্গে আমার পরিবারের অন্য কারো কোনো সম্পর্ক নেই। ছেলে আমার কোনো কথা শোনে না।”

খাল ভরাট না করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, “মোশারফকে নিষেধ করা হয়েছে। তার ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফজলুল হককেও বলা হয়েছে।”

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত জানিয়েছেন, তিনিও তাকে নিষেধ করেছেন।

জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কেউ খাল ভরাট করতে পারবে না। খাল ভরাট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

শুরুতেই বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসন এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।