মন্ত্রী-আমলাদের উপস্থিতিতে বেনাপোলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

দুই দেশের মন্ত্রী-আমলাদের উপস্থিতিতে বেনাপোলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছেন দুই বাংলার বাসিন্দারা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2019, 10:52 AM
Updated : 21 Feb 2019, 10:52 AM

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-রাজনীতিবিদদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ভারতের পেট্রাপোল আর বাংলাদেশের বেনাপোলের শূন্যরেখা।

গান আর আবৃত্তির ফাঁকে বাংলাভাষী দুই দেশের মানুষ পরস্পরের খোঁজখবর নেন। “একই আকাশ, একই বাতাস/ এক হৃদয়ে একই তো শ্বাস” এ রকম সব গান এক সুরে বেঁধে রাখে সবাইকে।

অনুষ্ঠানে ছিলেন পশ্চিম বাংলার খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, লোকসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বীণা মণ্ডল ও সহ-সভাধিপতি কৃষ্ণ গোপাল ব্যানার্জি, বনগাঁ উত্তর বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ পৌর প্রধান শংকর আঢ্য, সাবেক পৌর প্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য, দমদম পৌরসভার সিআইপি রিঙ্কু দে দত্তসহ রাজনীতিবিদ-কবি-শিল্পী-সাংবাদিক সাহিত্যিকদের একটি প্রতিনিধিদল।

বাংলাদেশ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল হক, পুলিশ সুপার মইনুল হক, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, ভাষাসৈনিক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক এম আর মাহাবুবসহ রাজনীতিবিদ-কবি-শিল্পী-সাংবাদিক সাহিত্যিকরা।

অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, ২০০২ সাল থেকে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার “ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতির” উদ্যোগে সীমান্ত এলাকার গোটা বিশেস সংগঠন শুরু করে এই মিলনমেলা।

“গত ১৮ বছরে তার পরিধি কিছুটা বেড়েছে। এবার দুই বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটি যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রপ্তানি টার্মিনাল সংলগ্ন শূন্যরেখায় তৈরি করা হয়েছে ‘একুশে মঞ্চ’। ওই মঞ্চে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।”

সরেজমিনের দেখা গেছে, কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও কয়েক ঘণ্টার জন্য উধাও হয়ে যায় সীমান্তের কাঁটাতার। দুই বাংলার মানুষ শূন্যরেখায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মুগ্ধতার চোখে। মেতে ওঠে আড্ডায়, স্মৃতিচারণে।

আগে থেকেই নিজ নিজ ভূখণ্ডে অপেক্ষায় ছিলেন আয়োজকরা। বেলা সোয়া ১১টায় শূন্যরেখায় প্রবেশ করে উভয় দেশের মানুষ ফুল দিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান।

পরে দুই বাংলার মানুষ নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাঙালির অর্জনকে দুই বাংলা একসঙ্গে পালন করছে। এটা খুবই গর্বের বিষয় । দুই দেশের সোহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মৈত্রীতে এ অনুষ্ঠান অনুপ্রেরণা যোগাবে।”

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক  বলেন, “একুশের গৌরবের উত্তরাধিকারী পৃথিবীর সব বাঙালি। এর ব্যাপ্তি শুধু ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অনেক বিস্তৃত। ভাষার টানে বাঙালি জাতির নাড়ির টানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে এখানে এসেছি।”

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, “ভাষার জন্য সংগ্রাম করে জীবন দিয়েছেন এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই। এ কারণে বাঙালি আজ বিশ্বের দরবারে গর্বিত।”

বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য বলেন, “২০০২ সাল থেকে বনগাঁর কিছু সংস্কৃতিকর্মী ‘একুশে উদযাপন কমিটি’ গড়ে সীমান্তের শূন্যরেখায় মাতৃভাষা দিবস পালন শুরু করেন। সেই থেকে প্রতিবছর একদিনের জন্য খুলে যায় সীমান্তের গেইট, বসছে দুই বাংলার মিলনমেলা।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সঙ্গীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল, ভারতের পর্নব, পৌষালী ব্যানার্জি, আব্দুল আলিমের মেয়ে নূরজাহান আলম, বাংলাদেশের আবৃত্তিকার শাহাদত হোসেন নিপু সংগীত পরিবেশন করেন।