চলে গেলেন একাত্তরের যোদ্ধা-মা খুরশীদ জাহান

নিভৃতে থাকা একাত্তরের যোদ্ধা-মা খুরশীদ জাহান বেগম চলে গেলেন অনেকটা নীরবেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকখুলনা, বাগেরহাট প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2019, 02:07 PM
Updated : 20 Feb 2019, 06:45 PM

মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা শহরের বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে তার বড় ছেলে আসাদুজ্জামান তাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে খুলনা শহরের বাড়িতে তিনি মারা যান। বিকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘদিন মুখের ক্যান্সারে ভুগছিলেন বলে আসাদুজ্জামান জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধান সম্পাদকের সঙ্গে একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা খুরশিদ জাহান বেগম (ফাইল ছবি)

তিনি স্বামী, তিন ছেলে ও পুত্রবধূ, দুই নাতিসহ আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাংখী রেখে গেছেন।

মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনায় শুক্রবার বাদ আসর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোড পুরাতন বড় জামে মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য মরহুমার বাসভবনে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আলমগীর কবীর।

একাত্তরের যুদ্ধদিনে সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার রান্না করা ও ক্যাম্পের হাসপাতালের যুদ্ধাহত রোগীদের সেবা-শুশ্রূষা দিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে নতুন ওয়েবসাইটের পরীক্ষামূলক সংস্করণ উদ্বোধন করেছলেন খুরশীদ জাহান বেগম (ফাইল ছবি)

খুরশীদ জাহান বেগম ১৯৭১ সালের জুন মাসে নিজের পাঁচ মাসের সন্তানকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তি সংগ্রামে।

১৯৬৮ সালে খুলনার ইকবাল নগর গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত হয়ে ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

এরই মধ্যে যুদ্ধে অংশ নিতে তার বড় ভাই পাকিস্তান সেনবাহিনী থেকে পালিয়ে চলে আসনে দেশে। রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার জন্য রাজাকারদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়ে পুরো পরিবার।

বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকীতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে এই নারী মুক্তিযোদ্ধা শুনিয়েছিলেন তার যুদ্ধদিনের কথা।

খুরশীদ জাহান বলেছিলেন, তখন মুসলিমদের খুব কম মেয়েই কলেজে পড়ার সুযোগ পেত। আর রাজনীতি করার কারণে এলাকার অনেকেরই চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ফলে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পলাতক জীবন শুরু হয়ে যায় তার।

তার ভাষায়, “প্রায়ই রাজাকার এসে আমাকে আর আমার ভাইকে খুঁজত। তখন আমার কোলে দুগ্ধপোষ্য সন্তান। এপ্রিলের শেষ থেকে আমাদের পলাতক জীবন শুরু।"

এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় খোঁজ পান মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের।

“তখন বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আর দেখছি কোথায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেওয়া যায়। এভাবে ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত খবর পাওয়া গেল, জিয়াউদ্দিন আহমেদ নামের এক ভদ্রলোক সুন্দরবনে একটা ক্যাম্প করেছেন। ঘটনাচক্রে আমার স্বামীও ছিল সেই ক্যাম্পের সেকেন্ড ইন কমান্ডার।”

পাঁচ মাসের সন্তানকে নিয়ে দুই ভাই-বোন সুন্দরবনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।

খুরশীদ জাহান ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনস্ত সুন্দরবন সাব-সেক্টরের বগী ক্যাম্পে নাম রেজিস্ট্রেশন করেন। পরদিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শরণখোলা ক্যাম্পে।