বিশ্ব ইজতেমা প্রস্তুতির আম বয়ান

তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার একদিন আগে জোবায়ের পন্থিদের প্রস্তুতিমূলক বয়ান হয়েছে।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2019, 04:37 PM
Updated : 14 Feb 2019, 05:07 PM

বৃহস্পতিবার বাদ আছর পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ বয়ান করেন এবং তার তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা জাকির হোসেন।

বাদ মাগরিব শুরু হয় আম বয়ান। আম বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমেদ লাট এবং তার তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক।

শনিবার দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ পক্ষের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে এবং শনিবার রাত ১২টার মধ্যে তারা ইজতেমাস্থল ত্যাগ করবে।

পরদিন রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর শুরু হবে সাদপন্থিদের ইজতেমা। সোমবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের চারদিনের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের আগেই টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এলাকা দেশি-বিদেশি ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের তাঁবুর নিচে ৫০টি খিত্তায় ৬৪ জেলার লাখ লাখ মুসল্লি বসে ইজতেমার মুরুব্বীদের বয়ান শোনার ও কার্যক্রম শুরুর  অপেক্ষা করছিলেন।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বী ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন ও মাহফুজুর রহমান জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শুরু হবে তাবলীগ জামায়াত আয়োজিত মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা। তবে বৃহস্পতিবার বাদ আছর পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ মাঠ জমানোর বয়ান শুরু করেন। আর তা তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. জাকির হোসেন। বাদ মাগরিব আম বয়নের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রাথমিক কর্যক্রম শুরু হয়েছে। ভারতের  মাওলানা  আহম্মদ লাট ওই বয়ান শুরু করেন। আম বয়ান তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক।

এবার বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি ইতোমধ্যে ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও মুসল্লিদের আগমন অব্যহত রয়েছে। এবার এক সাথে দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন বলে তারা জানান।

তারা আরও জানান, জুবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে ভাগ হয়ে ইজতেমায় যোগ দেবেন এবং শনিবার ও সোমবারে অনুষ্ঠিতব্য আলাদা দুটি মোনাজাতে অংশ নেবেন।

ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর বিস্তৃত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন তাদের নির্ধারিত তাঁবুর নিচে। তারা জিগির-আজগার এবং আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রান্নাবান্না, কাপড় কাচা ও গোসল করাসহ দৈনন্দিন কাজও সেরে নিচ্ছেন। ময়দানের আশপাশে বসেছে হরেক রকমের দোকান। এর মধ্যে অনেকেই সেরে নিচ্ছে প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও। এসব মিলিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে যেন মুসল্লিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও তরুনসহ সকল বয়সের মুসল্লীরা পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে ও টুপি মাথায় ইসলামের এ মেলায় শরিক হয়েছেন। ইজতেমায় ময়দানে যতটুকু চোখ যায় শুধু দেখা মিলে টুপী-পাঞ্জাবী পড়া মুসল্লীদের। মাথার উপর চটের তাঁবু নিচে সবুজ ঘাস।

দিনাজপুর থেকে ইজতেমায় আসা মুসল্লি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমা বিবাদমান হওয়ায় সকলের মধ্যে সংশয় ছিল এবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে কি না। তবে শেষ পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। প্রতি বছর ইজতেমায় অংশ নিয়ে থাকি। এবারও এসেছি। 

ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন

বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্নুনগর এলাকায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং যুব ও ক্রীড়া  প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল হামদর্দের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। এ সময় হামদর্দ বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান কাজী গোলাম রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকীম ইউসুফ হারুন ভুইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তাবলীগ জামাত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়। আল্লাহর-রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য এ ইজতেমার আয়োজন করে থাকে তাবলীগ মুরুব্বীরা। তাবলীগ জামাত বিশ্বে একটা বড় ডিসিপ্লিনের উদারণ। এটাকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। ”

যুব ও ক্রীড়া প্রতি মন্ত্রী রাসেল বলেন, ইজতেমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, টয়লেট নির্মাণসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হূমায়ূন কবীর বলেন, বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের মধ্যে কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। এছাড়া মুসল্লিদের আগমন অব্যহত রয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরাও রয়েছে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।