রাবিতে জোহার দেয়ালচিত্র মুছে গেল

ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ে প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহার দেয়ালচিত্র মুছে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিশফিকুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2019, 03:13 PM
Updated : 14 Feb 2019, 03:17 PM

এক বছর আগে আঁকা এই চিত্র বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন মুছে দেয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর লুৎফর রহমান।

ড. জোহার এ ছবি গত বছর করেছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। এর শিল্পী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক আফরুকুন নাহার তানিয়া ও সভাপতি শাকিলা খাতুনসহ আরও অনেকে।

এরপর গত ১১ ফেব্রুয়ারি ড. জোহার পাশে আাঁকা হয় ১৯৯৩ সালে ছাত্রশিবিরের হামলায় নিহত শহীদ তপন সরকারের আরেকটি ছবি।

এ দুটি চিত্রের শিল্পী আফরুকুন নাহার তানিয়া বলেন, “ড. জোহা আমাদের শিক্ষক হিসেবে একজন আইডল। এখন যারা শিক্ষকতা করছেন জোহা স্যারের মত খুব কম সংখ্যক শিক্ষকই আছেন। তার মাহাত্ম্য সবার মাঝে ধরে রাখতে সম্মান জানিয়ে এটি করা হয়েছিল। পরে ওই প্রতিকৃতির পাশেই ১৯৯৩ সালের ছাত্রশিবিরের হামলায় নিহত শহীদ তপন সরকারেরও আরেকটি প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার রাতে হঠাৎ করেই খেয়াল করি দেয়ালটি মুছে দিয়েছে কে বা কারা।”

রাবি ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহন্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে যে সম্পর্ক তাতে জোহা স্যার ও তপনের অবদান এখনও প্রাসঙ্গিক। জোহা স্যার ও তপনের গ্রাফিতির সঙ্গে দেয়াল লিখন করার মাধ্যমে তাদের অবদান ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

মুছে দেওয়ার পর

“বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই ড. জোহা সম্পর্কে তেমন জানে না। তাই আমরা শহীদ মিনারের পিছনে জনসমাগম স্থান এই এলাকায় এই গ্রাফিতি এঁকেছিলাম। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে তপন সরকারের ভূমিকা এ প্রজন্মের সামনে আনতে তারও গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, সর্বশেষ শহীদ তপনের গ্রাফিতি আঁকা হয় ১১ ফেব্রুয়ারি। ১৩ ফেব্রুয়ারি শহীদ তপন হত্যা দিবস পালন করা হয়।

“বুধবার রাত ৮টার দিকে এসে দেখি দুটি গ্রাফিতি সাদা রঙ দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে।”

এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, শহীদ ড. জোহা আন্দোলন-সংগ্রাম-প্রতিবাদের একটা প্রতীক। তাকে সামনে রেখে যারা আগামী দিনের সমাজ বদল করতে চায়, সত্যিকার অর্থেই যারা এই দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, তাদের জন্য এটি একটা লড়াই। সেই লড়াই যে সবাইকে করতে হবে, চালিয়ে যেতে হবে এই দেয়াল লিখন ছিল তার আহ্বান।

“যারাই মুছে দিক, তারা শুধু জোহাকে অপমান করেনি, নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকারও করেছে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর লুৎফর রহমান বলেন, “ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি দুজন সহকারী প্রক্টরকে সেখানে পাঠাই। তারা এসে আমাকে রিপোর্ট দেন যে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন পুরো শহীদ মিনারে রঙ করেছে; যার ফলে ওই গ্রাফিতি মুছে দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সংবাদ সম্মেলন

ছাত্র ইউনিয়নের নিন্দা

এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য অপকর্ম’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে নিজেদের টেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

সেখানে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় আমরা লক্ষ করি গ্রাফিতি দুটি মুছে ফেলা হয়েছে, যা শহীদ ড. শামসুজ্জোহা স্যার এবং শহীদ তপনের আত্মদানের প্রতি ভয়াবহ অশ্রদ্ধা প্রদর্শন বলে আমরা মনে করি।”