রোহিঙ্গাদের ফেরাতে দায়িত্ব মিয়ানমারের: জোলি

প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন এখনও নিরাপদ নয় বলে মনে করেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার বিশেষ দূত হয়ে আসা হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2019, 02:10 PM
Updated : 5 Feb 2019, 05:05 PM

রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরতে পারে, সেই পরিস্থিতি তৈরির দায়িত্ব মিয়ানমারের বলে মত জানিয়েছেন তিনি।

দুই দিনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে, তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি এই মত জানানোর পাশাপাশি নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়শী প্রশংসা করেন।

ঢাকায় ফেরার আগের দিন মঙ্গলবার বিকালে উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।

নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে থেকে এখানে আছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার এই শরণার্থীদের নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে ভয় পাচ্ছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গাদের তাদের আবাসস্থল রাখাইন প্রদেশে নিরাপদে থাকার মতো পরিবেশ এখনও তৈরি করতে পারেনি মিয়ানমার সরকার।

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বলেন, “রোহিঙ্গাদের অধিকার ও তাদের  ফিরে যাওয়া নিশ্চিতের দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। আমি আশা করি, তারা  রোহিঙ্গাদের এই সঙ্কটে মুখ ফিরিয়ে নেবে না।”

নাগরিকত্বের মতো একটি মৌলিক মানবিক অধিকার রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“তাদের নিজ ভূমে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে এটা তখনই হতে পারে যখন তারা নিরাপদ বোধ করে স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে এবং তাদের অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া হবে।”

ইউএনএইচসিআরের এই বিশেষ দূত বলেন, যারা মানবাধিকার লংঘন করেছে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মঙ্গলবার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন

ইচ্ছার বাইরে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না বলে তাদের আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেইসঙ্গে

রোহিঙ্গাদের ফেরার ক্ষেত্র তৈরিতে মিয়ানমারকে চাপ দিতেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মিয়ানমারকে রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং ইউএনএইচসিআরসহ অন্যদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে জোলি লাখ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সকল দায়িত্ব বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।”

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে ইউএনএইচসিআর কীভাবে বাংলাদেশ সরকারকে আরও সহযোগিতা করতে পারে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। 

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শিশুদের নিশ্চিত ভবিষ্যত এবং মিয়ানমারে নিজেদের পুনর্বাসনের জন্য গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে  শিক্ষা নিশ্চিতে আর কী করা যেতে পারে, তা দেখতেই আমি  এসেছি।”

রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়াতে পেরে গর্ব বোধ করছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন অস্কার বিজয়ী এই হলিউড অভিনেত্রী।

তিনি বলেন, “এই ঘটনা গত চার দশকের নির্যাতন ও বঞ্চনার, এ পর্যন্ত গড়িয়েছে।

“এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বিশ্বে ৬ কোটি ৮০ লাখ লোক উদ্বাস্তু। কারণ আমরা এক হয়ে এই সঙ্কট রোধ করতে পারিনি।”

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সোমবার সকালে বাংলাদেশে এসেই কক্সবাজার রওনা হন। সেখানে গিয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকূল এলাকায় বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। বিকালে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্মিত ট্রানজিট ক্যাম্প দেখতে যান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, মঙ্গলবার সকালে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি উখিয়ার ইনানির হোটেল রয়েল টিউলিপ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেন।

পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল বলেন, “অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ক্যাম্প পরিদর্শনকালে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। এ সময় মিয়ানমারে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার নারীদের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন। রোহিঙ্গারাও দুঃখ দুর্দশার কথা তার কাছে তুলে ধরেন।”

বুধবার দুপুরের পর জোলির ঢাকায় ফেরার কথা বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত এসপি ইকবাল।

আমেরিকান অভিনয়শিল্পী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ২০১২ সাল থেকে ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন।

জোলির আগে গত বছর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের বিশেষ দূত এবং বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।