জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই অচলাবস্থা চলছে শনিবার থেকে।
প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, “স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধের জেরে এই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। আমি বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।”
তবে কেন এই বিরোধ সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই তিনি মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও রেজাউল করিম বলেন, শনিবার থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে স্কুলের আয়-ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব রয়েছে।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের নাসির হায়দারের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক স্কুল সংস্কার, শিক্ষা উপকরণ ক্রয়সহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন।
“এছাড়া তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। শিক্ষার্থীদের বহিরাগতদের দিয়ে মারধরও করেছেন। তার স্বেচ্ছাচারী ও আগ্রাসী আচরণের কারণে অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।”
শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিভাবক সাঈদুল শরীফ (৪২) বলেন, তার মেয়ে সুরাইয়া খানম স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিল।
“প্রধান শিক্ষক তাকে ফেল করান। বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে গেলে আমার স্ত্রী হাসিয়া বেগমের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক ছোটলোকের মত অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এতে মনোকষ্টে আমি আমার মেয়েকে খুলনার একটি স্কুলে ভর্তি করাই।”
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তাক, তৃতীয় শ্রেণির জাহাঙ্গীর, চতুর্থ শ্রেণির আলম ও অপুসহ অনেকেই বলেছে, প্রধান শিক্ষিক তাদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ করেন। অন্যদের দিয়ে মারধন করান।’
এ কারণে প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করা না হলে তারা আর স্কুলে আসবে না বলে জানিয়েছে।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, “শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গ্রামের কোনো মানুষই ফাতেমা খাতুনকে প্রধান শিক্ষক পদে দেখতে চায় না। তার আচরণে সবাই বিরক্ত। তাই তাকে অপসারণ করা প্রয়োজন।”
প্রধান শিক্ষকের কারণেই স্কুলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে ওই গ্রামের আব্দুল আহাদ জমাদ্দার (৭০) বলেন, “আমাদের ছোট সোনামণিরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমি পাঠদান কার্যক্রম দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।”
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোমবার এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পাঠদান শুরুর ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা।
আনন্দ কিশোর বলেন, “পাঠদান শুরু করতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি সোমবার বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে পাঠদান শুরুর ব্যবস্থা করবেন।”
পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুনকে অন্য কোথাও বদলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে এখন পর্যন্ত অভিযোগ তদন্তের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর বলেন, “তদন্ত করা হবে।”
১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এখন ৩২২ জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন শিক্ষকরা জানিয়েছেন।