শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি ইটভাটার কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে শ্রমিকদের থাকার ঘরের ওপর পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। সবার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ও তার পাশের নিজপাড়া গ্রামে।
সরেজমিনে দুই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজন হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শোকে বাকশক্তি হারিয়েছেন কেউ কেউ।
শিমুলবাড়ি গ্রামের কনকের চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে বন্যা কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, “বাবা মরি গেইছে। হামার এলা কী হবে?”
বৃহস্পতিবার রাতে বাবার সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। খাতা কেনার জন্য সে বাবার কাছে ৫০ টাকা চেয়েছিল।
কনক শুক্রবার বিকাশে টাকা পাঠাতে চেয়েছিলেন। তার আগেই বাবার এমন মৃত্যু সে কিছুতেই মানতে পারছে না।
আর কনকের ৭০ বছর বয়সী বাবা ধৌলু রায় ছেলের মৃত্যুর খবরে হতবাক। তিনি কথা বলতে পারছেন না।
ভিটেমাটি থাকলেও আবাদি জমিজমা নেই পরিবারটির। একমাত্র দিনমজুরি ছিল তাদের অবলম্বন।
ববিতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২২ দিন আগে এলাকার অনেকের সঙ্গে কুমিল্লায় ইটভাটায় কাজ করতে যান কনক। বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীর সঙ্গে তার শেষ কথা হয়।
‘শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাড়ির পথে রওনা হওয়ার কথা ছিল’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
“সে বাড়ি ফিরবে ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে ফিরবে এটা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। দুই ছাওয়া নিয়ে আমি এখন কিভাবে বাঁচব। তাদের কিভাবে মানুষ করব।”
একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন নিজপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র সেলিম (১৬)।
তার মেজো ভাই শাহাজাদ (২৫) বলেন, প্রতিবেশী চাচা রিপনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিল সেলিম।
‘জ্ঞানের আলো বাড়াতে গেলেও তার জীবনের আলো নিভে গেল,’ বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তাদের বাবা রিকশা চালান। তার আয়ে কোনোমতে চলে সংসার।
শাহাজাদ বলেন, তারা তিন ভাই। বড় ভাই বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা।
“আমি আর ছোট ভাই সেলিম বাবা-মায়ের সংসারে। পরিবারে অভাব-অনটনের মধ্যে আমরা দুই ভাই লেখাপড়া করি। বাবা সংসারের খরচ জোগালেও আমরা নিজেদের পড়ালেখার খরচ নিজেরাই জোগাই। কখনও আমি কখনও সেলিম কাজ করে টাকার দরকার হলে।”
নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, ১৩ শ্রমিকের পরিবারের জন্য কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ২০ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।