শিক্ষক সমিতির ভোটের আগে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা

প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকে সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 01:26 PM
Updated : 23 Jan 2019, 01:26 PM

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের কর্মীদের এই আন্দোলনের পেছনে উপাচার্যের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের নীল দল। 

অন্যদিকে উপাচার্য রোস্তম আলী ফরাজী পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘কাদের ইশারায়’ ওই আন্দোলন হচ্ছে তা তিনি খতিয়ে দেখবেন।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভোট গ্রহণের কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ (নীলদল)এবং আওয়ামী লীগপন্থিদের একটি অংশ ও অন্যান্য দলকে নিয়ে গঠিত ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ'নামে দুটি প্যানেল থেকে মোট ৩০ জন শিক্ষক ছিলেন এ নির্বাচনের প্রার্থী।

কিন্তু এক ছাত্রীর ‘শ্লীলতাহানির চেষ্টার’ ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরে প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ দাবিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা ছাত্র ধর্মঘট ডেকে সকাল ৯টার দিকে ক্যম্পাসের প্রশাসনিক ভবনসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নির্বাচনের জন্যে যাবতীয় কার্যক্রম ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। কিন্তু আমরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ক্যম্পাসে এসে প্রবেশ করতে পারিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন স্থগিত করেছি। ভোটের নতুন তারিখ পরে জানানো হবে। ”

এ নির্বাচনে সভাপতি পদে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের প্রার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, “ভাইস চ্যান্সেলর সমর্থিত প্যানেলের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে প্রশাসন এই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।”

এবার নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই উপাচার্যের অনুসারীরা ভোটারদের ‘ভয়-ভীতি’ দেখানোর পাশাপাশি ‘বিভিন্নরকম অপতৎপরতা’ চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের রাধানগর মহল্লায় একটি ছাত্রীনিবাসে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় নেশাগ্রস্থ এক বখাটে।

“ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রীতম কুমার দাসসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বখাটের চাচার বাড়িতে বসে সমঝোতা করার চেষ্টা করে মিষ্টি খেয়ে চলে আসেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।”

পরে ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আসিফ ইকবাল চিন্ময় (২৭) নামের ওই তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

এরপর ‘সধারণ শিক্ষার্থীরা’ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতা বাবু বলেন, “শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের সাথে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”

নীল দলের শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রোস্তম আলী ফরাজী বলেন, “নির্বাচনের বিষয়টি আমার জানা নেই, আর এখানে আমার সমর্থিত কোন প্যানেলও নেই। নীল দল আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডিকে অযোগ্য আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছে। আসলে কাদের ইশারায় কেন তারা এই কাজ করছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”