ভগ্নস্বাস্থ্যের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই জীবনসঙ্কটে

জায়গায় জায়গায় পলেস্তারা ও ছাদ-দেয়ালের অংশ খসে পড়েছে; নেই বিদ্যুৎ। নড়বড়ে দরজা-জানালা আর বটগাছসহ অন্যান্য পরগাছায় ছেয়ে গেছে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র; সেই জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 05:35 AM
Updated : 23 Jan 2019, 06:36 AM

দেয়ালে ফাটল থাকায় বর্ষাকালে হাসপাতালের মেঝে সয়লাব হয় বৃষ্টির পানিতে; বিদ্যুত নেই বলে গরমে অতিষ্ঠ হতে হয় রোগীদের।

পাশাপাশি জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসকদেরই করতে হয় পিয়নের কাজ। ওই অবস্থাতেই প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয় তাদের।

সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা একতলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভবনটি যে কোনো সময় প্রাণহানির কারণ হতে পারে বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা।

বরমী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. আলমগীর হোসেন জানান, তিনি ডিপ্লোমা কর্মকর্তা হিসেবে সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সেখানকার মেডিকেল অফিসারকে অন্যত্র প্রেষণে বদলী করা হয়েছে। এছাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একমাত্র ফার্মাসিস্ট উত্তম কুমারকে বদলি করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।

অফিস সহায়ক আখের মিয়া মাসের অর্ধেকসময় বরমী স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে কাজ করলেও মাসের বাকি সময় তাকে থাকতে হয় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাই বর্তমানে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট এবং পিওনের কাজ তাকেই করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

১৯৫১ সালের ১৫ই জুন বরমী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালূর পর এরপর মাত্র একবার ভবনটির সংস্কার করা হয়েছিল বলে আলমগীর জানান। 

তিনি বলেন, “বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ছাদের উপরে বটগাছসহ অন্যান্য পরগাছা জন্মে তাদের শেকড় ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালে ফাটল তৈরি হওয়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই মেঝে পানি ঢুকে পড়ে। দরজা-জানালাগুলো নড়বড়ে। স্থানে স্থানের পলেস্টারা ও ছাদ-দেয়ালের অংশ খসে পড়েছে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে প্রাণহানী হতে পারে। এমন অবস্থাতেই এলাকাবাসীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

“এছাড়া সময়মত বিল পরিশোধ করতে না পারায় স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের বিদ্যুতের সংযোগও কেটে নিয়ে গেছে। এতে বর্ষাকালে মেঘে আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার আগেই ভবনের ভেতরে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। আর গরমের দিনে চিকিৎসক ও রোগীরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ”

ভাঙ্গা জানালা দরজা দিয়ে চোরেরা এখান থেকে বিভিন্ন সময় ঔষধসহ বিভিন্ন মালপত্রও চুরির ঘটনা ঘটছে অভিযোগ করে আলমগীর বলেন, “এ ব্যাপারে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভাগে জানালেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি।”

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মো. মইনুল হক জানান, ওই উপকেন্দ্রটি স্থানীয়ভাবে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণাধীন।

সেখানে সম্যসার কথা স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি ও বিভাগীয় পরিচালক, গাজীপুরের সিভিল সার্জন, হেল্থ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তিনি বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট অবসরে চলে যাওয়ায় এবং অফিস সহায়ক সংকট থাকায় উপকেন্দ্র থেকে ওই দুইজনকে আনা হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল অফিসারের প্রেষণ বাতিল করে আগের মেডিকেল অফিসারকেও ফেরত আনার আবেদন করা হয়েছে।”

গাজীপুরের হেল্থ অ্যন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহকারী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিব জানান, বরমী উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের জন্য জমি বা নির্দিষ্ট স্থান করে দিলেই সেখানে নতুন ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।