এসব মামলায় এক হাজারের অধিক আসামি রয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাভার মডেল থানার ওসি আবদুল আউয়াল বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় দুটি পোশাক কারখানা মামলা দায়ের করেছে। এসব ঘটনায় ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, টানা আট দিন শ্র্রমিক অসন্তোষের পর মঙ্গলবার থেকে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বিভিন্ন কারখানায় ঝুলছে সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ।
বিভিন্ন কারখানা থেকে এক হাজারের বেশি শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দাবি শ্রমিক সংগঠনের।
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুরে টানা শ্রমিক অসন্তোষের কারণে প্রতিদিনই মহাসড়ক অবরোধ হয়। এ সময় শত শত গাড়ি মহাসড়কে আটকা পড়ায় ব্যাপক যাত্রী ভোগান্তি হয়। আন্দোলনকারীরা বিক্ষিপ্তভাবে ভাংচুরও চালায়।
তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার কয়েকটি ধাপে শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো সংশোধন করেছে।
গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, আশুলিয়ার বুড়ির বাজার, জিরাবো ও কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার এ আর জিন্স পডিউসার লিমিটেড, এফ জি এস ডেনিমিন ওয়ার লিমিটেড ও বার্ড গ্রুপ, নীট এসিয়াসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকদের ছবি সম্বলিত সাময়িক বরখাস্তের তালিকা কারখানার মূল ফটকে ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
“সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় হয়! তাই শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে থাকে। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় যারা নাশকতাকারী এবং ভাংচুরের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
কিন্তু কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন ছাঁটাইয়ের শিকার না হয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে বুধবার বিকালে আশুলিয়া জামগড়ায় সম্প্রতি শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাভার-আশুলিয়া শ্রমিকরা সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন। নিরীহ শ্রমিক কেউ হয়রানির শিকার হবে না। তাই সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়া কারণ নেই।
“শ্রমিক আন্দোলনের সময় দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পযন্ত ২৫ থেকে ৩০ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, এই ঘটনা নিয়ে কোনো কারখানা থেকে শ্রমিক ছাঁটাই হলে, সংশ্লিষ্ট কারখানা ও সরকারের ঊধ্বর্তন মহলকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি।
সরকার বিরোধী মহল এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং আন্দোলনের নামে হামলা-ভাংচুর করেছে উলে।লখ করে তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।”
এ সময় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান শামীম, ঢাকা জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমানসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
কারখানায় ভাংচুরসহ মারপিট, ক্ষতিসাধন, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ১০ জানুয়ারি ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম।
গত ১১ জানুয়ারী এ আর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ আজিজ ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আড়াইশ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
একই দিন নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার প্রধান ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন।
১২ জানুয়ায়ি অরবিট এ্যাপারেলস লিমিটেডের শফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
একই দিন মাহমুদ ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার এইচআর বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহ আলম ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
১৩ জানুয়ারি হা-মীম গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
কারখানার ভিতরে ভাংচুর, লুটপাট, মারধর ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি ২৪ জন শ্রমিকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন জে কে গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারিক হাসান।
সাভারের হরিণধরা এলাকার ডার্ড গ্রুপের দীপ্ত এ্যাপারেলস কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা একটি মামলা করেছেন।