সেপটিক ট্যাংকে লাশ: বাবাকে ‘হত্যার বর্ণনা’ ছেলের 

‘মা ও ভাই-বোনদের নির্যাতনে ক্ষুব্ধ’ হয়ে ফেনীর এক যুবক তার বাবাকে ‘শায়েস্তা করতে গিয়ে’ হত্যা করে ফেলেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2019, 03:21 PM
Updated : 12 Jan 2019, 03:21 PM

গত ৪ জানুয়ারি নিখোঁজ হন ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম মধুগ্রামের মিদ্দা বাড়ির আবুল কালাম। এর ছয় দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে তার লাশ পাওয়া যায়।  

ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মুর্শেদ বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তার ছেলে আবুল হাসান।

আবুল হাসান ২০১৮ সালে উপজেলার মধুগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন।

ওসি এমএম মুর্শেদ বলেন, আবুল কালাম পশ্চিম মধুগ্রামের মিদ্দা বাড়ির  সামছুল হকের ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাবুর্চি ছিলেন।

ওসি জানান, ৪ জানুয়ারি শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন আবুল কালাম। এর ছয় দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে তার লাশ পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রী রেখা আক্তার ও ছেলে আবুল হাসানকে আটক করে পুলিশ। পরে ছেলে আবুল হাসানের বন্ধু ইমাম হোসেন রহিমকেও আটক করা হয়। রহিম কয়ৈরা গ্রামের ওসমান গনির ছেলে।
ওসি বলেন, নিহতের ছেলে আবুল হাসান জানান- তারা পাঁচ ভাই-বোন। তার বাবা কোনো কারণ ছাড়াই প্রায়ই তার ছোট ভাই-বোন এবং মাকে মারধর করতেন। দুর্ব্যবহার করতেন। এসব দেখে তিনি বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
ওসি আরও বলেন, গত ৪ জানুয়ারি শুক্রবার সকালেও তার বাবা ভাই-বোন ও মাকে মারধর করেন। ওইদিন বিকালে হাসান তার ভাই-বোনসহ মাকে নিয়ে নানার বাড়ি চলে যান। সন্ধ্যায় এলাকায় ফিরে তার বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে কীভাবে বাবাকে শায়েস্তা করা যায় সে পরিকল্পনা করেন বলে পুলেশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।  

হাসানের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ওইদিন আমাদের হাসানের বাবা ছাড়া কেউ ছিল না। হাসান ও তার তিন বন্ধু পরামর্শ করে মুখে কাপড় বেঁধে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে যান। তখনও ঘরের দরজা খোলা ছিল। ভেতরে আবুল কালাম দাঁড়িয়ে কি যেন করছিলেন।

“হাসান বলেন-‘আমার হাতে নলকূপের একটি লোহার পাইপ ছিল। আমি সেটি দিয়ে বাবার মাথার পেছনে জোরে আঘাত করি। আঘাত পেয়েই বাবা জ্ঞান হারিয়ে খাটের উপর পড়ে যান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি বাবার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দেখি কোনো নড়াচড়া নেই।’”
নিজের বাবাকে মেরে ফেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না বলে হাসানের ভাষ্য, বলেন ওসি।

বাবা মারা গেছেন দেখে হাসান ও তার সঙ্গীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং প্রায় চার ঘণ্টা পরামর্শ করে রাত আড়াইটার দিকে ঘরের পেছনে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে ভেতরে ফেলে দেন লাশ। হত্যার পর কোনো প্রমাণ না রাখতে আবুল কালামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও ওই ট্যাংকে ফেলে দেন বলে হাসান জানান, বলেন ওসি।
ওসি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হাসান হত্যাকাণ্ডে নিজে এবং আরও তিন বন্ধু জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নাম পরিচয়ও পুলিশকে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্ধু ইমাম হোসেন রহিম আটক রয়েছেন। বাকি দুজনকে আটক করতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
ওসি জানান, ঘটনার ক্লু উদঘাটন হওয়ার পর শুক্রবার রাতে নিহতের স্ত্রী রেখা আক্তারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ছেলে আবুল হাসান ও বন্ধু ইমাম হোসেন রহিমকে।

নিহতের বোন মামলার বাদী জরিনা বেগম বলেন, তার ভাই দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে পাঁচ ছেলে-মেয়ে। এই বউকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকতেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে-মেয়ে। তারা ঢাকায় থাকেন।

তিনি তার ভাইকে হত্যায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।