গাইবান্ধায় রশীদের জাপায় ফেরার ঘোষণা, ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী

বিএনপিতে গিয়ে নির্বাচন শেষে আবার দলে ফেরার ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন গাইবান্ধার সাবেক জাপা সভাপতি আব্দুর রশীদ সরকার।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2019, 03:21 PM
Updated : 8 Jan 2019, 03:21 PM

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি আব্দুর রশীদ সরকার বিএনপিতে যোগ দেন এবং ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেন।

নির্বাচনে হারার পর গত সোমবার তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে আবার জাতীয় পার্টিতে ফেরার ঘোষণা দেন।

এদিকে, আব্দুর রশীদ সরকারকে ‘নীতিভ্রষ্ট ব্যর্থ নেতা’ আখ্যায়িত করে তাকে আর কোনভাবেই জাতীয় পার্টিতে গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাগীব হাসান চৌধুরী হাবুল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের মতো গাইবান্ধায়ও জেলা নেতৃবৃন্দ মহাজোটের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন; কিন্তু সেই নির্বাচনে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আব্দুর রশীদ সরকার।

তিনি এক সময়ে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। তিনি সেই পদ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, আব্দুর রশীদ সরকার তার ব্যক্তিগত কার্যালয়কে জেলা জাতীয় পার্টির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।

“কিন্তু বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি ওই অফিসে টাঙানো জাতীয় পার্টির সাইনবোর্ড ও অফিস ঘরে থাকা জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের ছবি নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন।”

এই ঘটনায় জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনে আঘাত করা হয়। ওই কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে তিনি মনে করেন।

রাগীব হাসান আরও বলেন, “সোমবার (৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নাম করে আব্দুর রশীদ আবার জাতীয় পার্টিতে স্বপদে ফিরে আসার যে ঘোষণা দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আসলে এটা পাগলের প্রলাপ মাত্র।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার, জেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান খান আবু, সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম ঝন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউন্নবী রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম নুরুন্নবী মিঠুল, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য আব্দুল মান্নান সরকার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি আব্দুল জলিল সরকার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রশিদ সরকার যা বলেছিলেন

সোমবার বিকালে গাইবান্ধা শহরের কলেজ রোডে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রশিদ সরকার জাপায় পুনরায় যোগদানের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি এখনও গাইবান্ধা জেলা জাতীয় পার্টির (এ) সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে বহাল রয়েছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আব্দুর রশীদ সরকার

তিনি বলেন, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে হতাশা ও অভিমানে ভুগছিলাম। তখন বিএনপি আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে দাঁড় করিয়ে দেয়। এতে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরা আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হন এবং আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।”

সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো সহযোগিতা তিনি পাননি বলে মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় বিএনপির নিজেদের মধ্যে দলাদলি, পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসাসহ নানা কারণে দলটি তাদের ইমেজ হারিয়ে ফেলেছে।

“নির্বাচনে আমি যে ৬৮ হাজার ৬৭০ ভোট পেয়েছি তা আমার নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনগণের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এসব কারণে বিএনপির সাথে আমার আর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নির্দেশে আগের মতোই আমি জেলায় জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চালাব।”

ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সদস্য নূর মোহাম্মদ, গাইবান্ধা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা কৃষক পার্টির সভাপতি এস.এম বাবলু প্রমুখ।

আবদুর রশিদ সরকার দীর্ঘদিন ধরে জেলা জাপার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জাপার টিকিটে ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি গাইবান্ধা পৌরসভার কমিশনার ও পৌর চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি ২০০৯  সালে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

তিনি পান ৬৮ হাজার ৬৭০ ভোট। আর এ আসনে বিজয়ী মহাজোটের প্রার্থী মাহাবুব আরা বেগম গিনি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।