তানোরে সহিংসতার শিকার বিএনপি নেতাকর্মী

নির্বাচনের পর রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ধানের শীষ কর্মী-সমর্থকের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতার কেবল ব্যবসায় দখল করেছে একদল লোক।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2019, 04:54 PM
Updated : 5 Jan 2019, 05:15 PM

আতঙ্কিত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছেড়েছেন।

একদল অতি উৎসাহী লোক এ কাজ করলেও দলের দায়িত্বশীল কেউ এতে জড়িত নয় বলে দাবি আওয়ামী লীগের।

শনিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী সহিংসতার শিকার কলমা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।

এছাড়া রাজশাহী-১ (তানোর ও গোদাগাড়ী) আসনের নবনির্বাচিত সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী এলাকাবাসীর প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ছেন।

তানোর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি তানোর এলাকায় ডিশ লাইনের ব্যবসা করেন। ভোটের পর থেকে উপজেলার সব স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার গজ ডিশ লাইনের তার কেটে ফেলেছে।

“এছাড়াও ১৪টি ডিশ লাইনের নেটওয়ার্ক অফিসের সব সরঞ্জাম লুট ও দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। ভোটের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে আমার ডিশ লাইনের কেবল কেটে ফেলার কারণে হাজার হাজার গ্রাহক স্যাটেলাইট টিভি দেখতে পারছেন না।”

উপজেলার কলমা, কামারগাঁ, মাদারিপুর, সালমান্দা ও মহর গ্রামের বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে কয়েকশ বিএনপি নেতাকর্মী এলাকাছাড়া হয়েছেন বলেও মিজানের ভাষ্য।

তানোরের কলমা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বুধবার বিল্লী বাজারে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে গেলে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ময়নার উপস্থিতিতে তার লোকজন তাকে মারধর করে এবং তার মোটরসাইকেলটি ভাংচুর করে।

“এর আগে মঙ্গলবার বাধাইড় এলাকার বিএনপি কর্মী বকুলের বাড়ি ও গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে ফেলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা।”

কলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থী আমিনুল হক ১ হাজার ২৪৯ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী ৬৫৩ ভোট পেয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিএনপি প্রার্থী ভোট বেশি পাওয়ায় এ হামলা হয়েছে।

বাধাইল গ্রামের আজিমুদ্দিন বলেন, “ভোটের পরের দিন (৩১ ডিসেম্বর) চান্দুড়া বাজারে আমার কীটনাশকের দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় তারা এক লাখ টাকা নগদসহ বেশ কিছু মালামাল লুটে নিয়ে যায়। তারা লাঠি দিয়ে আঘাত করে আমাকে জখম করে।”

তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন; কিন্তু পুলিশ তার অভিযোগ নেয়নি, বলেন আজিমুদ্দিন।

তবে ভোটের পর সহিংসতার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি দাবি করে তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, যেখানে সহিংসতার খবর পেয়েছে সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগে তারা পালিয়ে গেছে।

ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বলে জানান তিনি।

ওসি রেজাউল আরও জানান, শনিবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী কমলা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তিনি গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের ডেকে কথা বলেছেন। বিষয়গুলো তাদের মধ্যে মীমাংসা করে নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

এখন এলাকায় পরিবেশ শান্ত। রোববার জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার কলমা গ্রাম পরিদর্শন করার কথা রয়েছে বলে জানান ওসি রেজাউল।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান ময়না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এসব ঘটনা দলের ভেতরের অতি উৎসাহী কিছু লোকের কাজ। এর সঙ্গে প্রকৃত আওয়ামী লীগ করেন এমন কোনো নেতাকর্মীর সম্পর্ক নেই।

“বিষয়টি আমরা শক্ত হাতে দমন করেছি। গত দুইদিন ধরে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।”

এদিকে, রাজশাহী-১ (তানোর ও গোদাগাড়ী) আসনের বাসিন্দাদের সহিংসতায় না জড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী।

শনিবার রাজশাহীর স্থানীয় দুইটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে তানোর ও গোদাগাড়ীবাসীকে কোনো প্রকার সহিংসতায় না জাড়িয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”