ধর্ষণে আ. লীগ নেতার সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হবে: ডিআইজি ফারুক

নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীতে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত এক আওয়ামী লীগ নেতার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2019, 05:13 PM
Updated : 2 Jan 2019, 05:15 PM

বুধবার সন্ধ্যায় সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের মধ্যবাগ্যা গ্রামে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এরপর তিনি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী ও তার স্বামীর সঙ্গেও দেখা করেন।

এ সময় তিনি তাদের নিরাপত্তা এবং ঘটনায় জড়িতদের প্রত্যেকের শান্তি নিশ্চিত করা হবে বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন বলে পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ সাংবাদিকদের জানান।

এর আগে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জড়িতদের কেউ ছাড় পাবে না।

গত রোববার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যবাগ্যা গ্রামের এক নারীকে (৪০) তার বাড়িতে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনার সঙ্গে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ ঘটনায় তার স্বামী থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন, তাতে নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে অন্যতম সন্দেহভাজন সোহেলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা তার বসতঘর ভাংচুর করে, ঘরে ঢুকে বাদীকে পিটিয়ে আহত করে এবং সন্তানসহ তাকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।

ডিআইজি ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনায় অভিযুক্তরা ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করে। ভোটের সময় তারা এলাকায় এসে অপরাধ সংগঠিত করে আবার চলে গেছে।

“ঘটনার পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হবে এবং অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।”

তিনি বলেন, মামলার বাদী চাইলে মামলায় আরও আসামি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে এবং তদন্তে আরও কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।

এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) মো. আবুল ফয়েজ ও পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

পরে ডিআইজি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গ্রেপ্তার দুই আসামি মো. সোহেল ও স্বপনের সঙ্গে কথা বলেন।

পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ জানান, বুধবার দুপুরে কুমিল্লার বরুরা উপজেলার মহেষপুরের একটি ইটভাটা থেকে মামলার প্রধান আসামি মো. সোহেলকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে মধ্যবাগ্যা গ্রামের মৃত ইসমাইলের ছেলে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা থেকে পুলিশ মামলার তিন নম্বর আসামি স্বপনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। স্বপন চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যবাগ্যা গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।

তারও আগে সোমবার মামলার ছয় নম্বর আসামি কুড়াইল্যা বাসুকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে বুধবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি দল এবং আইন ও সালিস কেন্দ্রের তিন সদস্যের অন্য একটি দল নোয়াখালী আসে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।