টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অনশনরত সাবেক এই মন্ত্রী সোমবার দুপুরে রিটার্নিং অফিসারের কাছে এক চিঠিতে একথা জানান।
চিঠিতে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “আমার অনশন ধর্মঘটের ১৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত; কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একই সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার।
“আমার যদি কোনো ক্ষতি হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে বলে ঘোষণা দিচ্ছি।”
এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, যার কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচনী প্রচারের কর্মী ও গাড়িতে হামলা অভিযোগ করছেন সাবেক এই মন্ত্রী।
রোববার দুপুরে কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল-বল্লভবাড়ি এলাকায় লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা হয়, তার গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
এর প্রতিবাদে রোববার বেলা পৌনে ৩টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নিয়ে এসে তিন দফা দাবিতে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী।
তার দাবিগুলো হলো- কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পর্যন্ত আর কোনো সহিংসতামূলক কার্যকলাপ করবে না মর্মে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মুচলেকা প্রদান।
রাতেও তিনি সেখানে অবস্থান করেন। তার কর্মসমর্থকরা সেখানে তাঁবু খাটিয়ে দেন এবং আলোর ব্যবস্থা করেন।
এদিকে, আমরণ অনশন ঘোষণার পর সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন শরীফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী সাহেব উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তিনি ওষুধও খাচ্ছেন না। খাবার না খাওয়ায় ধীরে ধীরে তার শরীরের সুগার কমে যাচ্ছে। এতে শরীর নিস্তেজ হয়ে শারীরিক ঝুঁকি বাড়ছে।”
এর আগে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও নিকটাত্মীয়রা লতিফ সিদ্দিকীকে দেখতে যান।
জামিলুর রহমান মিরন ও খোরশেদ আলম দেখা করতে গেলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমার অনশন প্রতিবাদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, স্থানীয় সাংসদের সহিংসতামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।”
এ সময় তিনি আরও বলেন, “আমি শেখ হাসিনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না, আমি সরকারকে বিব্রত করতে চাই না। আমি চাই সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন। আমি যদি শেখ হাসিনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইতাম, তাহলে আমি এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এই অবস্থান ধর্মঘট করতাম। তাহলে কী হত?”
তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন উল্লেখ করে বলেন, “দাবি মানা হলে কাউকে বলতে হবে না নিজেই চলে যাব, যতক্ষণ মানা না হবে ততক্ষণ কোথাও যাব না।”
লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্যপদ হারানোর পর কালিহাতীতে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সোহেল হাজারী।
তার আগে নিউ ইয়র্কে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে মন্তব্যের পর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন দলের তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকী।
তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন তিনি। এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।