সোমবার প্রতীক বারাদ্দের পর কেন্দ্রীয় বিএনপি নেত্রী জীবা আমিনা খানের পক্ষে ধানের শীষের প্রচারে জেলা শহরে মাইকিং শুরু হয়েছে।
জেলা শহরের পৌর খেয়াঘাট এলাকায় একাত্তরের বধ্যভূমির আশপাশে মাইকিং করায় মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের নৃশংসতার কথা মনে করিয়ে দেয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
এলাকাবাসী বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে জীবা আমিনার বাবা ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে ঝালকাঠির হিন্দু অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয়। এই গণহত্যার সবচেয়ে বড় সাক্ষী হলো ঝালকাঠি শহরের পৌর খেয়াঘাট বধ্যভূমি।
সোমবার দুপুরে এই বধ্যভূমি এলাকায়ও জীবা আমিনা পক্ষে মাইকে প্রচার চালানো হয়। খবর পেয়ে ঝালকাঠি বধ্যভূমি সংরক্ষণ সংগঠন ‘হৃদয়ে একাত্তর’ জরুরি বৈঠকে বসে।
‘হৃদয়ে একাত্তর’ সংগঠনের সভাপতি হাসান মাহামুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিজয়ের মাসে পৌর খেয়াঘাট বধ্যভূমি এলাকায় রাজাকারকন্যার পক্ষে মাইকিং হৃদয় বিদারক, বড় কষ্টের।
“তাই জীবার পক্ষে এ এলাকাটিতে মাইকে প্রচার বন্ধ রাখতে আমারা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাব। সে বিষয় নিয়ে জরুরি বৈঠক করে সাংগঠনিকভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঝালকাঠির প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন খান বলেন, “পাকিস্তানের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে ঝালকাঠির হিন্দু অধুষিত ভীমরুলি, শতদশকাঠী, জগদীশকাঠী, ডুমুরিয়াসহ ১০/১২টি গ্রামে একাত্তরে নির্মম গণহত্যা হয়। হাজারো হিন্দু বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নারী নির্যাতন এবং লুটপাটসহ নির্মম নির্যাতন চলে এ অঞ্চলে।
“তারই কন্যা জীবার পক্ষে এই বিজয় মাসে প্রচারণার শব্দ আমাকে সেদিনের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকারের সন্তান নির্বাচনের প্রার্থী ভাবতে বড় কষ্ট লাগে।”
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ বায়জীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সর্বশেষ ২০১৪ সালেও ঝালকাঠি থেকে সাংগঠনিকভাবে আমরা আক্তার ব্যারিস্টারের নাম পাঠিয়েছি। আক্তার ব্যারিস্টারের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় একাত্তরে ঝালকাঠির হিন্দু অধ্যুষিত বিলাঞ্চলে পাকবাহিনীর হাতে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা ও নির্যাতন হয়েছে।”
ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তানের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। এ মুসলিম লীগ নেতা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ঝালকাঠি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল বারেকের কাছে পরাজিত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভীমরুলী, শতদশকাঠী, ডুমরিয়া ও জগদীশপুর গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আক্তার ব্যারিস্টারের নির্দেশে হিন্দু প্রধান গ্রামগুলোতে নয় মাস গণহত্যা চলে।
ভীমরুলি স্কুলের পেছনে, শতদশকাঠী সতিলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয়, জগদীশপুর স্কুল, ডুমুরিয়া ক্লাবসহ গ্রামগুলোতে গণহত্যার সেদির স্মৃতি চিহ্ন আজও গ্রামবাসীরা সংরক্ষণ করে আসছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের ১ নম্বর সহসভাপতি এবং ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য জীবা আমিনা খানের বাবা আক্তার উদ্দিন আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনায় প্রভাবশালী রাজাকারের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি সপরিবারে সৌদি আবর চলে যান।
জীবা আমিনা খানকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
২০০১ সালে ঝালকাঠি-২ (সদর ও নলছিঠি) এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টো। ২০০৮ সালেও তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পান। এবছরও তাকে তালিকায় রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত দলের প্রতীক দেওয়া হয় জীবা আমিনাকে।