ফেনীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওঠে ৬ ডিসেম্বর

ফেনীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উঢ়েছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 05:22 PM
Updated : 6 Dec 2018, 05:22 PM

হানাদারমুক্ত হওয়ার এই দিনটি পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে শহরের জেল রোডে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে স্মৃতিস্তম্ভ থেকে এক বর্ণাঢ্য পতাকা শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গির আলম সরকার, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দেবময় দেওয়ান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শারমিন জাহান, সিভিল সার্জন হাসান শাহরীয়ার কবির, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মীর আবদুল হান্নানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, ‘তরুণ সংঘ’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠন মুক্ত দিবস উপলক্ষে ৭১ জন সদস্য হেঁটে ফেনী সীমান্তের ৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করার কর্মসূচি পালন করে।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব জানান, ফেনী অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, পরে যিনি বীর বিক্রম উপাধি পান। তিনি ভারতের বিলোনীয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অভিযান চালান।

“এ সময় তারা সীমান্তবর্তী বিলোনিয়া, পরশুরাম, মুন্সিরহাট, ফুলগাজী হয়ে যুদ্ধ করতে করতে এগুতে থাকলে ফেনীর পাক হানাদার বাহিনীর একটি অংশ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী হয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের রাস্তায় এবং অপর অংশ শুভপুর ব্রিজের উপর দিয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।”

মোতালেব আরও বলেন, অপরদিকে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) ফেনী মহাকুমা কমান্ডার ও ফেনী-২ আসনের সাবেক সাংসদ অধ্যাপক জয়নাল আবদীনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দাগনভুঁইয়া, রাজাপুর, সিন্দুরপুর হয়ে ফেনী শহরের দিকে এগুতে থাকে।

“মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাক হানাদাররা ৫ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে পায়।”

সে সময় ফেনী অবাঙালি মহকুমা প্রশাসক বেলাল এ খানও পাকবাহিনীর সঙ্গে চলে যান। ফেনী হানাদারমুক্ত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে জানান মোতালেব।

ফেনী অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক বীর বিক্রম জাফর ইমাম বলেন, একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত হলেও পাকহানাদারদের প্রথম আত্মসমর্পণ ছিল ফেনীর বিলোনিয়ায়। চূড়ান্ত বিজয়ের ৩৬ দিন আগে ১০ নভেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুজন অফিসারসহ ৭২ জন সৈনিক আত্মসমর্পণ করেছিল।

ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান বলেন, একাত্তর সালে ১১ জুন রাতে শান্তি কমিটির নেতা ও বর্তমান জামায়াতের আমির মকবুল আহম্মদের নির্দেশে আলবদররা দাগনভূইয়া উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সিলোনিয়া লালপুর গ্রামের পাল বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় হিন্দুপাড়ায় আগুন দিয়ে ১০ জনকে হত্যার করে। একই সময় পার্শ্ববর্তী এলাকার খুশিপুর গ্রামের আহসানউল্যাহ নামে অন্য এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে লাশ সিলোনিয়া নদীতে ফেলে দেয় আলবদররা।

নৃশংস এই হত্যায় মকবুলসহ যেসকল যুদ্ধাপরাধী জড়িত তাদের আইনের আওয়তায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

একই সঙ্গে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ফেনীর পলাকত কুখ্যাত রাজাকার চৌধুরী মাঈনুদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকরের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।