শনিবার বিকালে জানাজা নামাজ শেষে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কাচারী পাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার বাড়ি থেকে লাশ আনা হয় রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ মাঠে। সেখানে দুপুর ২টায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে রাজীবপুর থানা পুলিশ তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
এরপর তার মরদেহে পুস্পস্তক অর্পণ করেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন।
তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের জানান, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ও শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য আকাশের উজ্জ্বল তারার মতই বীরপ্রতীক তারামন বিবির নামটিও মানুষের কাছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে।
তাকে স্বরণীয় করে রাখতে জেলাবাসীর দাবিগুলো তুলে ধরার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুত দেন তিনি।
মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা কিশোরী তারামন বিবিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন রান্নার কাজে সহযোগিতার জন্য। পরে সেখানে তিনি অস্ত্র চালনা শেখেন।
একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী একটি গানবোট নিয়ে সেখানে হানা দেয়। তারামন বিবিও সেদিন সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন এবং শত্রুদের পরাস্ত করেন। এরপর বেশ কয়েকটি যুদ্ধে পুরুষ সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে লড়াই করেন এই বীর নারী।
মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তারামনকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাকে খুঁজে বের করেন। নারী সংগঠনগুলো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।