বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাভার পৌর এলাকার রাজাশন রোডের মজিদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় বুলডোজার ও ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে দোকানপাট ও ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তখন মাথায় লাল ফিতা বাঁধা ও হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লুটপাট করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ইন্টিলিজেন্স) এমারৎ হোসেন বলেন, “পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে ৩২ জন পুলিশ সদস্য দিয়ে দখলের কাজে সহায়তা প্রদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক আমরা এসেছি।”
তিনি বলেন, ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালত দেওয়ানী ডিক্রি জারি ১৬/২০১২ মোকদ্দমা মূলে আদালত কর্তৃক ডিক্রিদার মিজানুর রহমান খোকন পক্ষকে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকলেও জজ আদালতের প্রতিনিধি ছিলেন বলে তিনি জানান।
পুলিশ জানায়, হেমায়েতপুরের ঝাউচর এলাকার মৃত আব্বাস আলী মুন্সীর ছেলে মোহাম্মদ আলী আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা (নম্বর ১৬/১২) দায়ের করেছিলেন। এ মোকদ্দমায় ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। যারা জমিতে দখলে ছিলেন তারা হচ্ছেন ফরিদ হোসেন, ফজলুল হক, শহিদুল ইসলাম ওরফে মজনু, আব্দুল বাতেন চৌধুরী, আব্দুল মালেক, লিটন খাঁ, আবু তাহের, আলী হোসেন, আবুল কাশেম ও আজিজুল মোল্লা।
গত রোববার ঢাকার ২য় জুগ্ম জেলা জজ আদালত মিজানুর রহমান গংদের পক্ষে রায় দেয়।
জমিতে দখলে থাকা ফজলুল হক দেওয়ানের স্ত্রী রাজিয়া বগেম বলেন, ১০ শতাংশ জমির উপর সড়কের পাশে নয়টি দোকান ও পিছনে ঘর তুলে পরিবার নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন তারা।
“দুপুরে হঠাৎ কিছু লোক পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। লুটপাটও করেছে।”
সড়কের পাশে মুদি দোকান, কাঠের দোকান, চাউলের আড়ত, ফার্নিচার দোকান ভাংচুর করার সময় লাল ফিতা ও হেলমেট পরা লোকজন লুটপাট করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ফরিদ হোসেন বলেন, ১৯৩২ সালে সাত শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।
“কিন্তু আচমকা সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচর এলাকার মিজানুর রহমান নামে এক লোক নাকি আদালত থেকে ডিক্রি পেয়েছে দাবি করে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে আমাদের ঘর থেকে বের করে ভাংচুর করে দখলে নিয়েছে।
“আমরা এখন কোথায় যাব? কোথায় থাকব? এই বৃদ্ধ বয়সে রাতে পরিবার নিয়ে ফুটপাতে থাকতে হবে।”
আগে নোটিশ পেলে ঘর থেকে কিছু মালামাল বের করতে পারতেন; দখলকারীরা তাদের সেই সুযোগও দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা কোনো নোটিশও পাইনি। এমনকি আদালত থেকে কোনো ভাংচুর ও দখলের ঘটনা থাকলে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা; কিন্তু আমাদের এখানে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট আসেনি।”
দখলের নেতৃত্বদানকারী লুৎফর রহমান বলেন, “হেমায়েতপুরের ঝাউচর এলাকার মিজানুর রহমান গংরা আদালত থেকে ডিক্রি পেয়েছেন। তাই দখল নিতে এসেছি।”
দখলকারীদের তত্ত্বাবধানকারী হাবিবুল্লাহ নিজেকে সাভার থানা কৃষকলীগের সভাপতি দাবি করে বলেন, “আমি দখল করি না; আমি দেখাশোনা করছি; এর বেশি আর কিছু না।”