সাভারে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়

সাভারের বিভিন্ন স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 06:49 AM
Updated : 20 Nov 2018, 06:49 AM

সাভারের বাড্ডা উচ্চ বিদ্যালয়, স্বর্ণকলি আদর্শ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল, শুকুরজান স্কুল, উদয়ন স্কুল, শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অ্যাসেড স্কুল, সাভার ল্যাবরেটরি কলেজ, ম্যাস্ট্রোক্রাউন কলেজ, অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি স্কুল, চাইল্ড হ্যাভেন স্কুল, আমিন ক্যাডেট একাডেমি, দেওয়ান ইদ্রিস কলেজ, সৃষ্টি স্কুল, দ্যা টাঙ্গাইল ক্যাডেট একাডেমিসহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ অভিযোগের তালিকায় রয়েছে। 

সরকারিভাবে বিজ্ঞান শাখার জন্য ১৮০০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য ১৬৮০ টাকা ফি নির্ধারণ করা দেওয়া হলেও এসব স্কুলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।

তারা বলছেন, বিজ্ঞান শাখার ফরম পূরণের জন্য কোনো কোনো স্কুলে দশ হাজার, মানবিক ও ব্যবসায় শাখার জন্য সাড়ে ছয় হাজার টাকাও আদায় করা হচ্ছে।

এদিকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সাভারের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল বলেন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ পাওয়ায় বাড্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ সরকার বলেন, ৫৩টি বেসরকারি স্কুলের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী তাদের বিদ্যালয় থেকে ফরম পূরণ করেছে। তাদের ক্ষেত্রে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৫০০ টাকা আর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৭০০ টাকা করে নিচ্ছিলেন তারা। 

স্বর্ণকলি আদর্শ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরকে ২০০ টাকা জরিমানা করে সর্তক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া অভিযানের পর ব্যাংক কলোনি এলাকার অ্যাসেড স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ বাড়তি টাকা অভিভাবকদের ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন।

ব্যাংক কলোনী এলাকার শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য ছয় থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান ওবায়েদ বলেন, তারা ১৭৫০ টাকা ফি নিচ্ছেন। বাকি টাকা নিচ্ছেন নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষার্থীদের ‘বিশেষ কেয়ার’ দেওয়ার জন্য।

এতে সরকারি বিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারি ফি শুধু সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য।”

পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার আমিন ক্যাডেট একাডেমির বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার প্রায় ৮২ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য নয় হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পরিচালক রানা আহমেদ বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

জামগড়ার এলাকার চাইল্ড হেভেন স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা মকবুল হোসেন বলেন, তার ছেলেসহ স্কুলের ২৪ জন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণে সাড়ে নয় হাজার টাকা করে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২২০০ টাকা করে নিচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত ফির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি দাবি করেন।

নিশ্চিন্তপুর এলাকার দেওয়ান ইদ্রিস কলেজের ৫৬ জন পরীক্ষার্থীর অনেকেই বলেছে, তাদের স্কুলে ৭ ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে ফরম পূরনের জন্য। স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।

সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. কামরুন্নাহার জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৬১টি। এর বাইরে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কয়েকশ স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে।

সব প্রতিষ্ঠানে তদারকি করা কঠিন হলেও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ রাসেল হাসান বলেন, এসএসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত টাকা অভিভাবকদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।