বগুড়ায় নবান্ন উৎসবে মাছের মেলা

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীতে প্রতিবছরের মতো এবারও নবান্ন উৎসবে মাছের মেলা বসেছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2018, 02:06 PM
Updated : 18 Nov 2018, 02:38 PM

নানা প্রজাতির ও আকারের বড় বড় মাছ উঠেছে প্রায় দুইশ বছর প্রাচীন এই মেলায়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ২০ গ্রাম স্বজনদের মিলনমেলায় মুখর হয়েছে।

পঞ্জিকানুসারে প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণ সনাতন ধর্মাম্ববলীরা নবান্ন উৎসব পালন করে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর মাছের মেলা বসে উথলীতে। নবান্ন উৎসব উথলী হলেও রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গনেশপুর, রহবল শিবগঞ্জসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে চলে উৎসব।

প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগে থেকেই নিমন্ত্রণ করা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা নতুন ধানে নবান্ন নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী  হিন্দুরা এই নবান্ন মেলার উদ্যোক্তা হলেও আশপাশের গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসে।

মাছের মেলার কথা বলা হলেও ক্ষেত থেকে নতুন তোলা শাক-সবজির পসরাও সাজানো হয় মেলা চত্বরে।

এছাড়াও সেখানে নাগরদোলা, শিশু-কিশোরদের খেলনার দোকানও বসেছে। সেই সঙ্গে মিষ্টান্ন ও দইয়ের একটি বড় বাজারও বসানো হয় মেলা চত্বরে।

মেলায় আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, এখানে প্রচুর মাছ কেনাবেচা হয়েছে। দেড় কেজি থেকে শুরু করে ১৮ কেজি ওজনের বাঘাইড়. বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড কার্পসহ নানা রকমের মাছ বিক্রি হয় মেলায়। তবে দাম ছিল বেশি।

বাঘাইড়, রুই-কাতলা ও চিতল মাছগুলো ছয়শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ তিনশ থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ২০০-৪৫০ টাকা দরে ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়।

এছাড়া নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতি কেজি দেড়শ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

মাছ বিক্রেতা কালাই উপজেলার পুনট গ্রামের মোসলেম উদ্দিন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেলায় ছোট-বড় মিলে দেড় শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৬ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন।

মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য ২০টি আড়ত খোলা হয়। সেসব আড়ত থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।

পাশের নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ভবতোষ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি মেলার দিন নতুন শাক-সবজিতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসে।

শিবগঞ্জ উপজেলার ধোন্দাকোলা গ্রামের প্রতুল কর্মকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি এই মেলা। আশপাশের এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় নবান্নের মেলাটি জমজমাট হয়। মেলায় নবান্নের সব উপকরণওই পাওয়া যায়।”

মেলায় মাছ কিনতে এসে বেড়াবালা গ্রামের আজির উদ্দিন ও গণেশপুর গ্রামের সুখেন চন্দ্র দাস বলেন, উথলীর নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে সৌখিন চাষিরা মাছ মজুদ করে রাখেন।

এলাকার কে কত বড় মাছ মেলায় তুলতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলে মাছ চাষিদের মধ্যে। এছাড়া আড়তদাররা তো আছেই। এলাকার লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়।

উথলী বহুমুখী মৎস্য আড়তের স্বত্ত্বাধিকারী ফজলুল বারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগে মেলাটি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ব্যাপকতা লাভ করেছে। শুধু আশপাশেরই নয় পুরো শিবগঞ্জ উপজেলার মানুষ এখানে নবান্নের বাজার করতে আসে। মাছের মেলার খবর পেয়ে শহর থেকেও অনেকে সেখানে ছুটে যান মাছ কিনতে।

তবে তুলনামূলকভাবে এবার মাছের আমদানি অনেকটা কম বলে তিনি মনে করেন।